Select Language

[gtranslate]
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার ১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

।। সহযাত্রী ।।

সায়ন্তনী দাস ধর " একটু সরে বসা যাবে?" মোলায়েম স্বরে জিজ্ঞেস করে অরুণা।

” আর কত চাপব? এরপর তো জানলা দিয়ে বেরিয়ে যাব।”

” চতুর্থ আসনে বসলে ওরকম ঝুলেই বসতে হয়, দিদি।”

” দিদি কি নতুন নাকি?”
চোখ কপালে তুলে নানারকম মুখভঙ্গি করে ট্রেনের কামরার সহযাত্রীরা সকলে মিলে উত্তর দেয় অরুণার একটিমাত্র প্রশ্নের।

‘ ভদ্রতা জানেন না? আমি কি খারাপ ব্যবহার করেছি আপনাদের সাথে? একটু সরে বসলেই ভালভাবে বসতে পারি। ইচ্ছেই নেই অন্যকে একটু স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়ার।’ না, না এ কথাগুলো বলতে প্রবল ইচ্ছে হলেও বলতে পারেনি শান্তিপ্রিয় অরুণা, অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে আত্মসংবরণ করল।

মেয়ে তুহিনাকে রোজই সকালের ট্রেনে অফিসে যেতে হয়। সে বিলক্ষণ জানে এই ব্যস্ত সময়ে ট্রেনে যাওয়ার হ্যাপা।
” এই সময়ে না গেলেই পারতে, মা। তোমার তো অভ্যেস নেই…”

” শুনলি তো, কাজটা খুব দরকারি। দশটার মধ্যে না পৌঁছোলে হবে না। চিন্তা করিস না, অতটাও অপটু নই আমি।”

ট্রেনে উঠতে গিয়েই প্রথম ধাক্কা খেল অরুণা। এত ভিড়ের মধ্যে কিছুতেই সে উঠতে পারল না। পরপর দুটো ট্রেন ছেড়ে দিতে হল। ঠিক সময় পৌঁছোতে পারবে তো? পরের ট্রেনে যেভাবে হোক উঠতেই হবে। অনেক কষ্টে মেয়েদের কামরায় উঠল অরুণা। প্রচণ্ড ভিড়ে দাঁড়ানোই মুশকিল! হকাররা যাতায়াতের সময় এমন ঠেলছে যে কয়েকবার পড়তে পড়তে সামলালো অরুণা!
” আপনি আসনগুলোর মাঝের জায়গায় ঢুকে যান।” উপদেশ দিল একজন।
” ওখানে তো জায়গাই নেই!” অবাক অরুণা।

” আপনি কি নতুন নাকি? সবে তো এক সারি যাত্রী দাঁড়িয়েছে, আরও এক সারি হবে। আপনি ওদের পিছনে উল্টোদিকে মুখ করে দাঁড়ান।”
অনেক কষ্টে উপদেশমত দাঁড়াতে গিয়েই…

” ওরে বাবা, পা টা দিল রে … দেখে যেতে পারেন না? অদ্ভুত!”

” ওহ্, আ… আমি বুঝতে পারিনি…” অরুণা কাঁচুমাচু।
বেশ কটা স্টেশন পেরিয়ে যাওয়ার পর সামনের জন উঠে দাঁড়াল। অরুণা সেখানে বসতে যেতেই…

” আরে আরে, আমার বলা আছে তো! আমি বসব।” বেশ কিছুটা দূর থেকে একজন চেঁচিয়ে ওঠে।

” সেকি! আমি তো কতক্ষণ থেকে দাঁড়িয়ে আছি, আপনি তো সবে উঠলেন!” অরুণার কথায় চারিদিক থেকে হইহই রব ওঠে।

” কে কোথায় নামবে জিজ্ঞেস করে নিজের আসন আগে থেকে ঠিক করে রাখতে হয়। এটাও জানেন না?”

“কোথা থেকে যে আসে এরা? সকালের এই ভিড়ের সময় আসেই বা কেন?”

কোমরটা টনটন করছিল অরুণার। স্থূলকায়া মহিলা অরুণাকে ঠেলে বসার আসন দখল করল। ইচ্ছে হচ্ছিল কষিয়ে চড় কষাতে, আত্মসংবরণ করতে হল। অনেক পরে চার নম্বর আসনে বসতে পেল অরুণা। বসা তো নয়, ঝুলে থাকা! ঘন্টাখানেকের পথ পেরোতে এত অসম্মান পাওনা ছিল! অনেককিছু বলতে ইচ্ছে করছিল অরুণার। কিন্তু কথা বাড়ালে আরও কত অপমান সইতে হবে ভেবে আবারও আত্মসংবরণ করল অরুণা।

” পথটুকু বিনা তর্কে কাটিয়ে দিও। কিছু বলতে গেলেই নিজের সম্মান হারাবে।” তুহিনার পরামর্শ মনে করে দাঁতে দাঁত চেপে চুপ করে বসে রইল অরুণা। অপেক্ষা গন্তব্যের।

সৌজন্যে প্রতিলিপি

ekhansangbad
Author: ekhansangbad

Related News

Also Read