সন্দীপ শ্রীবাস্তব:- এক বুড়ি লাঠি ধরে কাঁপতে – কাঁপতে এসেছে দক্ষিনেশ্বরে। ডান হাতে লাঠি, বাঁ হাতে ছোট্ট একটি পাতার ঠোঙা।
ইচ্ছে ঠাকুরকে একটু মিষ্টিমুখ করানো।
কিন্তু তাঁর ঘরে প্রচন্ড ভিড়। সাধ্য কি অনামা – অজানা বুড়ি সে ঘরে ঠাঁই পায়। নিরিবিলিতে বলে একটু তার প্রানের কথা। অগত্যা নহবতে এসে দাঁড়াল।
বললে, ‘ মা একটু সন্দেশ এনেছিলুম ওঁকে খাওয়াব বলে। কি ভিড় হয়েছে সেখানে। উপায় নেই মনের ইচ্ছাটি পূর্ণ করি। তাই তোমার কাছে রেখে গেলুম মা, আমায় হয়ে তুমি খাইয়ে এস।’
‘ ঐ ভিড়ের মধ্যে আমিই বা যাব কি করে? ‘ বললেন শ্রীমা। ‘ আপনার সন্দেশ আপনিই দিয়ে আসুন।
বুকে বল বেঁধে ভিড়ের দিকে আবার এগুলো বৃদ্ধা। আশ্চর্য, ঢুকতে কেউ তাকে বাধা দিল না। দেখল তক্তপোশের পায়ার কাছে অনেকে অনেক রকম নৈবেদ্য রেখে গেছে, তারই মধ্যে নিজের ছোট্ট ঠোঙাটি লুকিয়ে রাখল। প্রনাম করে চলে গেল নীরবে। প্রানের কথাটি বলা হল না। হে হৃদয়বিহারী, বুঝে নাও আমার মর্মের গুঞ্জন।
ভাবাবেশ হয়েছে ঠাকুরের। দেহভূমিতে নেমে বলে উঠলেন, ‘ খাব। খিদে পেয়েছে। ‘ স্তূপীকৃত নৈবেদ্য থেকে বড় ঠোঙাটি বেছে নিলেন গৌরীমা।
ঠাকুর বললেন, ‘ উঁহু।’
শাঁসালো দেখে আরো একটি বের করলেন গৌরীমা। এটিও ঠাকুর বাতিল করে দিলেন।
আঙুল দেখিয়ে বললেন ; ‘ ঐ যে, ছোট্ট ঠোঙাটি — ‘
সেই বুড়ির ঠোঙা। সেই বুড়ির নিবেদন।
সবটুকু সন্দেশ খেয়ে নিলেন ঠাকুর। সন্দেশের মিঠায় শুনলেন তার প্রানের কান্নার মধুরিমা।