Select Language

[gtranslate]
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার ১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

।। মাতা হিংলাজ শক্তিপীঠ ।।

বাপি সরকার:- আতঙ্কবাদীদের শূন্যে ভাসিয়ে রেখে ছিলেন মাতা ” হিংলাজ দেবী ” ।।
হিন্দুদের কাছে মা ” হিংলাজ দেবী বা হিঙ্গল ” দেবী আর মুসলিমদের কাছে ইনি ” নানী পীড় “।।

” হিংলাজ ” দেবী গুহা মন্দির পাকিস্তানের বলুচিস্তানের পাহাড়ী এলাকার এক ঘাটিতে অবস্থিত । ইহা করাচী থেকে উওর-পশ্চিম ২৫০কিমি দূরে ও আরব সাগর থেকে ১৯কিমি দূরে হিঙ্গল নদীর পশ্চিমী তটে মকরান মরুভূমিতে খেরথার পাহাড়ের কাছে চন্দ্রকূপ পাহাড়ে এক গুহাতে অবস্থিত মাতার মন্দির । সুরন্য় পাহাড়ের নিচে অবস্থিত এই গুহা মন্দির এত বড় যে ভক্তরা আশ্চর্য হয়ে দেখে যায় । ইতিহাসে এই মন্দিরটি ২০০০ বছরেরও বেশী সময় ধরে বিদ্যমান আছে ।


মন্দিরটি একটি প্রাকৃতিক গুহা মন্দির । এখানে এক মটির বেদীর উপর এক ছোটো আকারের একটি ” শিলাখন্ড ” আছে, যেটি সিন্দুর ( সংস্কৃতিতে হিঙ্গল ) দিয়ে মাখানো আছে , এই শিলাখন্ডকে মাতা “হিংলাজ” দেবীর প্রতিরূপের রূপে পুজিত হন, তাই মাকে ” হিঙল ” দেবী বলা হয়ে থাকে ।

মন্দিরটি কোনো মানব দ্বারা নির্মিত নন তাই এই মন্দিরের কোনো দরজা নেই । একদিক দিয়ে প্রবেশ ও অন্য দিক দিয়ে প্রস্থান । কথিত আছে যে, দেবী এখানে স্নান করতে আসেন । মন্দির পরিসরে শ্রী ” গনেশ ” ও মা ” কালীকা ” মন্দির আছে এছাড়াও এখানে ব্রহ্মকুন্ড ও নীড়কুন্ড অবস্থিত আছে । পাথরের সিঁড়ি দিয়ে যেতে আগে পাবেন সিদ্ধিদাতা শ্রী গনেশ জীর মন্দির । তারপরে মাতা হিংলাজ দেবীর দর্শন পাবেন। যা মনে হবে যেন মাতা বৈষ্ণো দেবী ।


এইস্থানে মায়ের ” ব্রহ্মরান্ধ ” ( মাথার ঠিক মধ্যভাগ ) পতিত হয়েছিল । সব ধার্মিক গ্রন্থতে প্রথম এই পীঠস্থানটির উল্লেখ আছে ।
এখানে মাকে কট্টরী ও ভগবান ” ভোলেনাথ ভীমলোচন ভৈরব ” নামে পুজিত হন ।


এই মন্দিরে গভীর আস্থা রাখা ভক্তদের মতে, কেউ কাশীতে গিয়ে স্নান করুক বা না করুক, অযোধ্যা গিয়ে পুজো করুক বা না করুক , যদি একবার মাতা হিংলাজ দেবীর দর্শন করে নেন তাহলে আর কোনো দেবীর দর্শন না করলেও চলবে । কোনো স্ত্রী ( বিবাহিত মহিলা ) মাতা হিংলাজ দেবীর দর্শন করে , তখন তাকে হাজিয়ানী বলা হয়ে থাকে । ওই স্ত্রীকে সকল ধার্মিক স্থানের সন্মান দেওয়া হয় । যদি কোনো মানতধারি মায়ের কাছে হেঁটে আসে তাহলে তার শরীরে ব্যাথা হয় না, কোনো কষ্ট হয় না । কিন্তু মানতধারির মনস্কামনা পূর্ণ হয়।



যখন পাকিস্তানের জন্ম হয়নি আর ভারতের পশ্চিমী সীমান্তে আফগানিস্তান ও ইরান ছিল । ওই সময় হিংলাজ শক্তিপীঠ হিন্দুদের কাছে এক প্রবিত্র স্থল ছিল । পাকিস্তানের বলুচিস্তানের মুসলিমরাও হিঙ্গল দেবীর পুজো করেন, লাল কাপড়, ধুপ, মোমবাতি, ইত্তর, ফুল আর সীরনি ( সিন্নি )দিয়ে পুজো দেন । হিংলাজ শক্তিপীঠ হল হিন্দু ও মুসলমানদের সংযুক্ত মহাতীর্থ । হিন্দুদের কাছে মা” হিংলাজ ” দেবী আর মুসলিমদের কাছে ইনি ” নানী কা পীড় ” ।

তন্ত্রচুরামনিতে উল্লেখ আছে,
” সাত দ্রীপ শক্তি সব রাত কো রচৎ রাস ।।
প্রাতঃ আপ তিহু মাত হিংলাজ গির মে ” ।।

অথার্ত, সাত দ্বীপের সব শক্তি একত্রে রাতে রাস লীলা করে আর সকাল হলেই সব শক্তি মাতা হিংলাজ দেবীর ভেতর ফিরে আসে ।
কথাই আছে যে, কোনো ব্যক্তি মাতা হিংলাজ দেবীর দর্শন করে, তাহলে সে পূর্ণ জন্মের কর্ম দন্ড ভুগতে হয় না ।

পরশুরাম ২১ বার ক্ষত্রিয়দের মারার পর , বেচেঁ থাকা ক্ষত্রিয়রা মাতা ” হিংলাজ ” দেবীর কাছে প্রান রক্ষার প্রার্থনা করেন । তখন মাতা হিংলাজ দেবী ওদের ব্রহ্মক্ষত্রিয় বানিয়ে দেন , তারপরে ভগবান “পরশুরাম” থেকে ওদের অভয় দান প্রাপ্ত হয়। ভগবান পরশুরামের পিতা মহর্ষি “জমদ্রগি আসারাম” এইস্থানে ঘোর তপস্যা করেছিলেন , ওনার নামে আসারাম স্থানটি আজও অবস্থিত আছে ।

মান্যতা আছে যে, রাবনকে বধ করার পর ভগবান রামকে ব্রহ্মা হত্যার পাপ লাগে । এই পাপ থেকে মুক্তি পেতে ভগবান রাম মা ” হিংলাজ ” দেবীর যাত্রা করেন এবং এক বিশাল যজ্ঞ করেন ।

এই প্রবিত্র স্থলে অনেক নামী গুনি ঋষি এখানে পুজো অর্চনা করে গেছেন , যেমন গুরু গরক্ষনাথ, গুরু নানকদেব , দাদা মক্ষান । আজও এখানে গুরু গরক্ষনাথের চশমা রাখা আছে।

মুসলিম কালে এই মন্দিরটিকে আতঙ্কবাদীরা বার বার ক্ষতি করবার প্রয়াস করেছে , যতবার ক্ষতি করবার চেষ্টা করেছে , ততবার হিন্দু মুসলিম মিলে মায়ের মন্দির বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে । যখন এই মন্দির ভারতের হাতে ছিল, তখন কিছু আতঙ্কবাদী মন্দিরের ক্ষতি করতে এসেছিল । তখন মা ” হিংলাজ ” দেবী সব আতঙ্কবাদীদের শূন্যে ভাসিয়ে রেখে ছিলেন ।

একদিন মা প্রকট হয়ে বরদান দিয়ে ছিলেন যে, যে ভক্ত আমার চুল চালাবে তার মনস্কামনা পূর্ণ হবে। চুল হচ্ছে ১০ ফুট লম্বা ও ৪ ফুট চওড়া এক আগুনের নালা । যার মধ্যে দিয়ে ভক্তকে হেঁটে যেতে হবে । যেসব ভক্তরা এই চুলে চলেছে তাদের শরীরে কোনো রকম পীড়া বা ব্যাথা হয়নি । তাদের মনস্কামনা পূর্ণ করেন মাতা হিংলাজ দেবী । এখন এই চুল চালানো হয় না ।

নবরাত্রিতে পুরো ন দিন পুজো ও শক্তি আরাধনা করা হয় । শুধু পাকিস্তান নয় পুরো পৃথিবী থেকে হিন্দু ভক্তরা এই স্থানে মায়ের দর্শন করতে আসেন । ভারত ও সিন্ধ প্রদেশ থেকে লাখ লাখ শিখ হিন্দুরা এখানে উপস্থিত হন ।

ekhansangbad
Author: ekhansangbad

Related News

Also Read