সুমিতা বেরা :-মিঠু দেবী সেই সকাল থেকে ক্রমাগত ঘর বার করছে । একটা চাপা উত্তেজনা মিঠুদেবী কে এক জায়গায় সুস্থির হয়ে বসতে দিচ্ছে না ! বার বার রাস্তা মুখো ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াচ্ছেন ।
একটা চাপা উত্তেজনা মিঠু দেবীর মন কে আচ্ছন্ন করে রেখেছে ! ঘড়িতে এখন বেলা সাড়ে এগারোটা.. আকাশ মেঘলাচ্ছন্ন । হাওয়া স্তব্ধ !
গাছের একটা পাতাও নড়ছে না ! বৈশাখের গুমোট গরম তার ওপর মিঠুদেবীর তীব্র উত্তেজনা!
মিঠু দেবী আজ ভোর ভোর রান্না সেরে নিয়েছেন। মিঠুর মেয়ে দীপা আবার খিদে সহ্য করতে পারে না । এসেই খেতে দাও.. খেতে দাও করে বাড়ি মাত করবে! ফুল প্যান্ট, শার্ট গেঞ্জি এদিক ওদিক ছড়িয়ে রাখবে । কি মনে করে মিঠু দেবী একবার দীপার ঘরে গেলো । না একদম ফিটফাট করে সাজানো ঘর !
মিঠু দেবী জানেন — ওর মেয়ে দীপা আগোছালো । এতো নিপুন ভাবে ঘর সাজিয়েছে রঞ্জনা। দীপা আর রঞ্জনা স্কুল বন্ধু । সেই স্কুল জীবন থেকে ওরা পরস্পর পরস্পর কে ভালোবাসে । সেই প্রেম ওদের ভিতর গজিয়ে উঠেছে যে প্রেমকে আজকের সমাজ ঘৃণার চোখে দেখে !
সমাজের চোখে ওরা লেসবিয়ান।
সমাজের চোখে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বছর দুয়েক হোলো ওরা একই রুমে থাকে । দীপা তো নামেই মেয়ে। ওর পোশাক আশাক কথাবার্তা সব কিছুতেই ছেলে ছাপ !
ছোটবেলা থেকে পড়াশোনায় তুখোড় দীপা এখন কলেজে অধ্যাপনা করে । রঞ্জনা গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে বি এড করছে। সেই ছোটবেলা থেকে দুজন দুজনের ভীষণ বন্ধুত্ব । এই নিয়ে কম অশান্তি হয় নি দুই বাড়িতে ।
সেই দুঃখে চিন্তায় দীপার বাবা মারা যান বছর খানেক আগে। ওদের ঘনিষ্ট মেলামেশাতে রঞ্জনার বাড়ি থেকেও প্রবল আপত্তি ছিল । সমকামিতা সমাজের একটা ঘৃণ্য সম্পর্ক.! সব বাঁধা অতিক্রম করে রঞ্জনা এক কাপড়ে চলে এসেছিলো দীপাদের বাড়ি ।
দীপার মা মিঠু দেবী ঠান্ডা মাথায় সব কিছু মেনে নিয়েছেন মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে । মিঠু দেবীর মতে আগে মেয়ের ভালো থাকা তারপর অন্য কথা ।
গৃহ কর্মে নিপুণা রঞ্জনা আর পুরুষালি দীপা এখন এক সাথে এক ঘরে থাকে ।
সমকামিতা এখন আইনি সিদ্ধ। তাই মিঠু দেবী দীপার ইচ্ছা কে মেনে নিয়েছেন । ওদের সুখই মিঠুদেবীর সুখ। আত্মীয় স্বজন মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে । মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়েই মিঠু দেবীর বেঁচে থাকা।
হটাৎ বাইরে গাড়ির হর্ন শুনে মিঠু দেবী তাড়াতাড়ি করে ব্যালকনিতে এলেন। দেখলেন — রঞ্জনার কোলে সাদা তোয়ালে জড়ানো ফুটফুটে একটি বাচ্চা! কি মায়াময় ছোট্ট মুখখানি ! মাথা ভর্তি চুল ! ওরা অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে অনাথ আশ্রম থেকে বাচ্চাটি দত্তক নিয়েছে। আজ বাচ্চাটিকে ওদের হাতে তুলে দেবার কথা ছিল, তাই ওরা দুজন সকাল সকাল বেরিয়েছিল ।
মিঠুদেবী মনে মনে ভাবলেন —— থাকুক ওরা দুটিতে বাচ্চাটাকে নিয়ে সুখে । সংসার টাকে ভরাট করতে একটি
বাচ্চার দরকার ছিল ওদের । মিঠু দেবীর মনটা আনন্দে নেচে উঠলো ! মনে মনে ভাবলেন — সংসার টা এবার টলোমলো পায়ে, চুলবুল চুলে আর খিলখিল হাসিতে ভরে উঠবে !
সৌজন্যে প্রতিলিপি