Select Language

[gtranslate]
৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বুধবার ২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

।। নিঃস্বার্থ উপলব্ধি ।।

অমিত রায়:-মধ্যবিত্ত মল্লিক পরিবারের ছোট ছেলে সাধন যার স্ত্রী বিশাখা। আর বড় ছেলে গৌরবের স্ত্রী নিবেদিতা।

শ্বশুর শ্বাশুড়ি দুই বৌমার মাঝে ছোট বৌমা বিশাখাকে বেশী ভালোবাসতো কারন বিশাখা তার বাপের বাড়ী থেকে সব সময় কিছু না কিছু জিনিস শ্বশুর শ্বাশুড়ির জন্য আনতো। বিপরীতে দেখাশুনা করে নিবেদিতাকে গৌরব বিয়ে করলেও নিবেদিতার বাবা মা গরীব হওয়ায় আর বিশাখার মতো বাপের বাড়ী থেকে তেমন কিছু দিতে না পারায় শ্বশুর শ্বাশুড়ি নিবেদিতাকে অনেক অবজ্ঞা, অবহেলা ও অপমান করতো।

নিবেদিতার মা বাবা তাদের মেয়েকে বিয়ের সময় জামাই গৌরবকে তাদের সাধ্যমতো কিছু দিলেও তাতে শ্বশুর শ্বাশুড়ির মন ভরেনি। ছোট বৌমা বিশাখাকে মাথায় করে রাখতো শ্বশুর শ্বাশুড়ি। কিন্তু নিবেদিতার কোন কর্মকে মূল্যায়ন করতোনা গৌরবের মা বাবা। নিবেদিতা ছিলো সুন্দরী আর শিক্ষিত। তবুও সংসারে সারাদিনে প্রচুর কাজ করতে হতো তাকে। তারপর এতো কাজ করেও নানা খোটা শুনতে হতো শ্বাশুড়ির। ওদিকে বিশাখা সারাদিনে দু একটি কাজ করতো। আর বড়লোক বৌমা বলে শ্বাশুড়ি তাকে কাজ করতে বারণ করতো।


সপ্তাহে সাত দিনের মধ্য তিন দিনই বাপের বাড়ী গিয়ে থাকতো বিশাখা কিন্তু নিবেদিতাকে ছ মাসে একবার বাড়ী যেতে দিতো শ্বাশুড়ি। সংসারের যাবতীয় কাজ নিবেদিতাকে করতে হতো। স্বামী গৌরবের আয়ের উৎস কম থাকায় বেশী কিছু বলতে না পারলেও গৌরব নিবেদিতাকে খুব ভালোবাসতো। তাই নিবেদিতাও স্বামীকে সব কিছু বলতো না কারন নিবেদিতা চাইতোনা মল্লিক পরিবারের কোন ঝামেলা হোক। তাই সে নিজে মানিয়ে গুছিয়ে নিতো। ছোট ছেলে সাধন সরকারী চাকরি করতো যেখানে ছিলো উপরি আয়ে সুবিধা যার কারনে বিশাখার স্বামী পয়সার গরমে যেমন ছিলো অহংকারী তেমনি নিবেদিতাকেও সহ্য করতে পারতোনা। কিন্তু নিবেদিতা বিশাখাকে নিজের ছোট বোনের মতো মনে করতো সব সময়।

গৌরবের পেশায় ছিলো একজন মুদির দোকানদার। আর ওখান থেকে যা আয় করতো সেটার দুভাগ সংসারে দিতো আর এক ভাগ নিজের সংসারে খরচ করতো। যেহেতু পরিবারে হাড়ি সবার এক ছিলো তাই সাধন বেশী টাকা পরিবারকে দিতো বলে বিশাখাকে মাথায় নিয়ে নাচতো শাশুড়ি। আর নিবেদিতা বলতে গেলে কাজের লোকের মতো সারাদিন সংসারের যাবতীয় কাজ করতো। বিশাখা মাধ্যমিক পরীক্ষা দিলেও পাস করতে পারেনি। ওদিকে নিবেদিতা ছাত্রী হিসেবে ভালো ছিলো কিন্তু গরীব তাই অভাবের জন্য তার বাবা অনার্স পড়ার সময়ে গৌরবের সাথে বিয়ে দেয়।

তাই নিবেদিতার পড়াশুনা আর হয়নি। ভালো পরিবার বলে গৌরবের হাতে নিবেদিতাকে তুলে দেয় তার বাবা। বিশাখার একটি ছেলে আর নিবেদিতার ছিলো একটি মেয়ে। এরপর প্রতি বছরের মতো মল্লিক বাড়িতে দুর্গাপূজার আমেজ শুরু হয়। সাধন তার বউকে নিয়ে পুজোর বাজার করলেও তার দাদা গৌরব আর বৌদি নিবেদিতা ও ভাইজিকে পুজোতে কিছু কিনে দিতোনা। এতে দুঃখ ছিলনা গৌরবের। কারন গৌরব জানে তার আয় ভালোনা তাই সে বড় ছেলে হয়ে তার মা বাবা, সাধনের ছেলেকে আর নিজের সন্তানকে পুজোর জামা কাপড় কিনে দিতো। কিন্তু নিবেদিতা আর নিজে কিছু পুজোতে নিতোনা। পুজোর বাকী আর চারদিন। তৃতীয়ার দিন দুপুরে হঠাৎ গৌরবের ফোনে একটা কল আসে।


সেখানে একজন বলে আপনি তাড়াতাড়ি হসপিটালে আসুন আপনার ভাই সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হসপিটালে। কথাগুলি শুনে গৌরব তখনই হসপিটালে গিয়ে দেখে তার ভাই সাধনের অবস্হা খুব খারাপ। কারন মোটর বাইক দুর্ঘটনায় সাধনের হাত পায়ের দু তিন জায়গার হাড় ভেঙে যায় আর সব থেকে ভয়ঙ্কর ক্ষতি হয় সাধনের মাথার খুলি উপড়ে যায় যেটা ডাক্তারটা মেডিসিন দিয়ে শীতল স্হানে রেখে দিয়েছেন। আর সাধনকে কৃত্রিম উপায়ে মাথায় একটি আবরন দিয়ে রাখা হয়ে আইসিউতে।


যেখানে সাধন মৃত্যুর সাথে লড়ছে। এসব দেখে গৌরবের পায়ের তল থেকে মাটি সরে যায়। কি করবে ভেবে উঠতে পারেনা। তখন ভাবে বাড়ীতে কি জানাবে! আবার ভাবে বাড়ী জানালে এই খবর শুনে বৃদ্ধ মা বাবা কি সহ্য করতে পারবে! সব কিছু কেমন যেন গুলিয়ে যায় গৌরবের। এরপর সব ঘটনা নিবেদিতাকে জানিয়ে গৌরব বলে তুমি ওদের যেভাবে হোক বুঝিয়ে নিয়ে হসপিটালে এসো। নিবেদিতার দয়ার শরীর তাই এসব শুনে তারও অবস্হা খারাপ হয় তবুও বাড়ীর বউয়ের মতো সবাইকে আগলে রেখে সাহস করে শ্বশুর শ্বাশুড়িকে জানায়।

আর সাধনের স্ত্রী বিশাখাকে জানালে বিশাখা পাগলের মতো হয়ে পড়ে। এরপর বাড়ীর সকলে কান্না করতে থাকে আর হসপিটালে যায়। সেখানে গিয়ে শোনে সাধনের বাঁচবার আশংকা খুব কম। ডাক্তার বলে মাথার খুলি উঠে গেছে সেটাকে পুনরায় স্হাপন করতে গেলে এই মুহুর্তে আশি থেকে নব্বই লক্ষ টাকার প্রয়োজন। তাই এখনই আপনারা টাকার ব্যবস্হা করুন না হলে কি হবে কিছু বলা যাবেনা। এসব শুনে বিশাখা হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। আর গৌরবের বাবা মা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে। আর তখন গৌরবও বুঝতে পারেনা কি করবে! গৌরব তখন ভাবে এতো টাকা কোথায় পাবো! আর সাধন যা আয় করেছে সেগুলি তো তার বউ ফুর্তি করে উড়িয়ে দিয়েছে যার কারনে এতো টাকা যোগাড় করাও অসম্ভব।

এমনকি গৌরব তখন ভাবে নিজেদের বাড়ী বিক্রি করে দিলেও এতো টাকা এই মুহুর্তে কেউ দেবেনা। এখন কি হবে এই ভেবে গৌরব নিবেদিতাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে আর বলে আমার ভাইটাকে বাঁচাতে হবে আমি এখন কি করে ওকে বাঁচাবো! নিবেদিতা তখন বলে যে করে হোক একটা পথ বের করতে হবে। দুর্গা পুজার সব আনন্দ যেন এক নিমিষেই শেষ হয়ে যায় মল্লিক পরিবারে। যখন সবাই আর কদিন পর পুজোর আনন্দ করবে সেখানে মল্লিক বাড়ী হসপিটালে সবাই সাধনকে নিয়ে জীবন মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে।

এরপর নিবেদিতা তার বাবার বাড়ী গিয়ে সব জানালে তার বাবা বলে আমার তো তেমন কিছু নেই যা আছে পাশের এক ফালি জমি সেটা বিক্রি করলে হয়তো দুই তিন লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে সেটুকুই দিতে পারি কিন্তু এই মুহুর্তে আমি জমির কেনার লোক পাবো কোথায়। বাবার কথাশুনে নিবেদিতা কান্না করতে থাকে আর বলে তাহলে আমার দেওরটা কি মারা যাবে আর আমার বোনটা কি বিধবা হবে এটাই কি তুমি চাও ঈশ্বর!

এই বলে বাবার বাড়ী থেকে নগদ কিছু টাকা নিয়ে চলে আসে। আর ভাবতে থাকে কি হবে শেষ মেষ। ওদিকে ডাক্তার সাত দিন সময় দিয়েছে অপারেশনের জন্য। এর মধ্যে অপারেশন করে মাথার খুলি না বসাতে পারলে হয়তো সাধনকে বাঁচানো যাবেনা। সব কিছু চিন্তা করে গৌরব আর নিবেদিতা টেনশন করে সারাদিন। দেখতে দেখতে দুদিন পার হয়। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হসপিটালে থাকে নিবেদিতা তারপর রাতে বাড়ি ফিরে যেতো কারন বাড়িতে থাকার কেউ নেই।


এমন করে তৃতীয় দিন নিবেদিতা ভোরে ঘুম থেকে উঠে হসপিটালে যাওয়ার জন্য দরজা খুলে একটি খাম পড়ে আছে দেখতে পায়। আর খামের উপর লেখা আছে নিবেদিতা এটা আপনার ভীষন প্রয়োজন। প্রথমে একটু আপত্তি হলেও পরে খামটি খুলে নিবেদিতা একটি চিঠি পায়। সেই চিঠিতে লেখা ছিলো এখানে একটি চেক আছে সেটা আপনি আপনার প্রয়োজন মতো যে টাকা দরকার সেটা ব্যাংক থেকে তুলে নিয়ে আপনার পরিবারকে রক্ষা করুন।

আর কে কি কারনে এটা আপনাকে দিলো সেটা সময় হলে জানতে পারবেন। চিঠিটা নিবেদিতা পড়ে অবাক হয় আর ভাবে বোধহয় কেউ মজা করছে। তখন নিবেদিতা চিঠিটা ঘরে রেখে হসপিটালে চলে যায়। হসপিটালে গিয়ে শোনে তার দেওরের অবস্হা এতো খারাপ যে সাতদিন নয় বরং কালই অপারেশন করতে হবে। তাই ডাক্তার আজই ক্যাশে ৫০% টাকা জমা দিতে বলেছে। কিন্তু এতো টাকা একদিনে কোথা থেকে জোগাড় করবে নিবেদিতা।

স্বামী শ্বশুর সবাই চেষ্টা করছে কিন্তু প্রায় এক কোটি টাকা যোগাড় করা কি যে সে ব্যাপার! এরপর মাথায় যখন নিবেদিতার কোন কাজ করছিলোনা তখন ভাবে সকালে দরজায় ফেলে যাওয়া চেকটি ওটা দিয়ে কি টাকা তোলা যাবে! যদিও ভাবে এটা কেউ মজা করেছে কিনা তবুও ভাবে এখন টাকার খুব প্রয়োজন তাই দেখি চেষ্টা করে ওটা সত্যি না মিথ্যা।

তাই ভয়তে ভয়তে ব্যাংকে গেলে ওই চেকে নব্বই লক্ষ টাকা লিখে তুলতে গেলে দেখলো ব্যাংকের কর্মচারীরা খুব সুন্দর করে নিবেদিতাকে সাহায্য করে টাকাটা তুলে দিলো। নিবেদিতা অবাক হয়ে ভাবলো এতোগুলো টাকা তুললাম অথচ কেউ বললোনা যে আপনি যার একাউন্ট থেকে টাকা তুলছেন তার সাথে কথা বলিয়ে দিন এমন কিছু বরং সবাই নিবেদিতাকে টাকা তুলতে সাহায্য করলো। আর চেকটিতে যার স্বাক্ষর ছিলো সেটি ছিলো শুধু এ.বি নামে। যার কারনে নিবেদিতা এই নামের অর্থ বোঝেনি। যাই হোক টাকা তুলে নিবেদিতা তার স্বামীকে ব্যাংকে আসতে ফোন করলে গৌরব বলে ব্যাংকে কেন আসবো।

নিবেদিতা তখন বলে আসলেই জানতে পারবে। এরপর গৌরব ব্যাংকে এলে সব ঘটনা খুলে বললে গৌরবও সবকিছু শুনে চমকে যায়। তখন নিবেদিতা গৌরবকে বলে এখন এসব ভেবে লাভ নেই আগে ভাইটাকে বাঁচাতে হবে। তখন এই বলে তারা টাকা নিয়ে হসপিটালে গিয়ে ক্যাশে টাকা জমা করিয়ে দিলে ডাক্তার সাধনের অপারেশনের ব্যবস্হা শুরু করে।

হসপিটালে সবাই ঈশ্বরকে ডাকতে থাকে। এরপর সময় অনুযায়ী অপারেশন শুরু হয়। দীর্ঘ আট ঘন্টা পর ডাক্তার অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে বলতে থাকে আপনাদের প্রার্থনা আর আমাদের চেষ্টায় অপারেশন সফল হয়েছে। কিন্তু সাধনকে নিবিড় পর্যক্ষনে রাখতে হবে। একটু উনিশ বিশ হলে সাধনের মাথায় সমস্যা হতে পারে।

কারন অপারেশন করার পর Brain er Deep Position এ বানরের নাড়ীর দিয়ে সেলাই করা হয়েছে যেটির ছয় মাস পর সেলাই খোলা হবে। তাই খুব যত্নে সাধনকে রাখার পরামর্শ দেয় আর বিভিন্ন ঔষধ দিয়ে কদিন পর সাধনকে হসপিটাল থেকে ছেড়ে দেয় ডাক্তাররা। পরিবারের সকলের মুখে হাসি ফুটলেও এখন শুধু সাধনের সুস্থ হওয়ার আশা সবার। এতো কিছুর ভিতরে দুর্গা পুজো যে কবে শেষ হয়ে গেলো সেটি বুঝতে পারলোনা মল্লিক পরিবারের কেউ। বিশাখা যেন নতুন জীবন ফিরে পেলো। আর মা বাবাও তার ছেলেকে ফিরে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা।

আর যার কারনে এতো কিছু হলো সে নিবেদিতাও আবেগ আপ্লুত। গৌরব সবকিছু পরে বিশাখা ও তার মা বাবাকে জানালে তারাও প্রশ্ন করে কোথা হতে এতো টাকা পেলো নিবেদিতা! কিন্তু নিবেদিতার কল্যানে সাধন জীবন ফিরে পেলো তাই বিশাখা নিবেদিতার কাছে ক্ষমা চেয়ে বলে, দিদি তোমায় আমি অনেক অপমান করেছি কিন্তু তুমি আমায় সব সময় ছোট বোনের মতো আগলে রাখতে তাই আজও তুমি আমায় বাঁচালে। তুমি না থাকলে আমার স্বামীকে বাঁচানো যেতোনা।

নিবেদিতাকে গরীব ঘরের মেয়ে, হাড়হাবাতে কতো কিছু বলে অপমান করা গৌরবের মা বাবাও তখন ক্ষমা চাইলো। নিবেদিতা তখন সবাইকে বলে আমি কিছু করিনি বরং ঈশ্বর কাউকে পাঠিয়েছেন আমাদের পরিবারকে রক্ষা করার জন্য। তাই আমি চাই আমরা সবাই সব কিছু ভূলে মিলেমিশে সংসার করি। আর যিনি আমাদের পরিবারের এই বিপদের সময়ে এতো অর্থ দিয়ে পাশে দাড়িয়েছেন তার জন্য আমরা প্রার্থনা করি। কথাগুলো শুনে সবাই এক বাক্য বলে উঠলো হে ঈশ্বর তুমি ওনার মঙ্গল করো …

এটা তো গেলো সাধনের জীবন বেঁচে যাওয়ার শত চেষ্টার গল্প। কিন্তু এখন প্রশ্ন কে এই মানুষটি যে কিনা নিবেদিতার পরিবারকে বাঁচালো এতো বড় বিপদ থেকে। নিবেদিতা আর তার স্বামীও অনেক চেষ্টা করেছে এ.বি নামক ব্যাক্তিটিকে খোঁজার কিন্তু অনেক চেষ্টা করে তার কোন খোঁজ পাইনি নিবেদিতা। তারপর তারা ভেবে নেয় হয়তো কোন হৃদয়বান ব্যাক্তি যে এমন অনেককে সাহায্য করে অদৃশ্য থাকে নিজে। তাই এই ভেবে গৌরব আর নিবেদিতা এ.বি নামে সেই আড়ালের মানুষটির পরে আর কোন খোঁজ পাইনি।

এরপর নিবিড় যত্ন আর পরিচর্যায় সাধন সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে শুরু করে। দেখতে দেখতে আবার দুর্গাপূজা এসে যায়। কিছুদিন পর আবার সেই দু্র্গা পুজোর তৃতীয়ার দিন মানে সাধন যেদিন দুর্ঘটনায় পড়েছিলো সেই দিনেই নিবেদিতার মোবাইলে একটি কল আসে। কল রিসিভ করে নিবেদিতা হ্যালো বললে ওপার থেকে একজন বলে ওঠে কেমন আছো তুমি নিবেদিতা।

নিবেদিতা তখন তার পরিচয় জানতে চাইলে বলে আমি তোমার সেই বন্ধু যাকে তুমি কলেজ জীবনে অনেক সাহায্য করেছো, যাকে তুমি সিগারেট খাওয়া বন্ধ করিয়েছিলে, যাকে তার মায়ের দুর্ঘটনা হলে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছিলে, যাকে তুমি বিনা স্বার্থে বন্ধুর মতো আমার দারিদ্র্যের দিনগুলোতে পাশে থেকে প্রতিটি মুহুর্তে আমায় সাহস যোগাতে। আর সবশেষে যাকে আমি ভালোবাসতাম কিন্তু কখনও সেটা নিবেদিতাকে মুখ ফুটে বলতে পারিনি আমি সেই অমরপ্রীত।

যে আজ লন্ডনের একজন শিল্পপতি। যাকে সারা পৃথিবী আজ অমরপ্রীত বর্মন বা এ.বি নামে চেনে। এখন কি চিনতে পেরেছো তুমি! কথাগুলো শুনে নিবেদিতা অবাক হয়ে বলে তুমি কি সেই অমর, যে ছিলো আমার খুব কাছের বন্ধু কিন্তু হঠাৎ করে তুমি কোথায় হারিয়ে গেলে। আর তুমি আমাকে ভালোবাসতে সেটা তো কখনও বলোনি!

আর তুমি বিদেশে গেলে কেমন করে। তখন অমর নিবেদিতাকে বলে আমি চাকরির খোঁজে একদিন ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার সময় রাস্তায় এক বক্স টাকা পাই আর সেখানে যে ঠিকানা লেখা ছিলো সেটি ছিলো একজন শিল্পপতির। যেটা ফেরত দিতে গেলে সেই নিঃসন্তান

শিল্পপতি আমার সততা দেখে আমায় ছেলে বলে ডাকে। আর আমায় তার সব ব্যবসায় নিয়োগ করে সব কিছু আমার উপর দায়িত্ব দেয়। তারপর থেকে আমার আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। যদিও ওই ভালো মানুষটি আজ আর নেই। কিন্তু এতো কিছু জীবনে ঘটে যাওয়ার পরেও তোমায় আমি আজও মনে রেখেছি ভূলিনি। তোমার সব সময় খোঁজ রেখেছি। তুমি কোথায় থাকো, কেমন আছো, তোমার সংসারের সব খোঁজ রাখতাম। শুধু অপেক্ষায় ছিলাম যদি জীবনে একটি বার হলেও তোমার কোন উপকারে আসতে পারতাম। তাই যেদিন শুনলাম তোমার পরিবারের বিপদ তখন আমি আমার লোক দিয়ে তোমার বাড়ী সাহায্যর জন্য এমন ব্যবস্হা করেছিলাম।

কারন আমি ভয় পেতাম তোমায় কারন আমি নিজে বললে তুমি যদি আমার সাহায্য না নাও। তাই আমার এছাড়া আর কোন উপায় ছিলোনা। কিন্তু জানবে আমি প্রথমে তোমায় একজন বন্ধু ভাবি সম্মানের সাথে তারপর তুমি আমার ভালোবাসা। তাই তো নীরবে তোমায় ভালোবাসলেও সেটা কখনও প্রকাশ করতে পারিনি। নিবেদিতা তখন অমরকে বলে তুমি বিয়ে করেছো?

অমর বলে হ্যাঁ আমি বিয়ে করেছি কিন্তু গত দুবছর হলো আমার স্ত্রী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। আর আমার একটি মেয়েও আছে যার নাম তোমার নামে রেখেছি। কারন তোমাকে তো আমি ভূলতে পারিনি তাই ওর মাঝে তোমায় খুঁজে পাই। অমর বলে আমার স্ত্রী বেঁচে থাকাকালীন জানতো যে আমি তোমায় ভালোবাসি সেটা কখনও প্রকাশ করতে পারিনি।

তাই আমার স্ত্রী মৃত্যুর আগে আমায় বলেছিলো পারলে তোমার নিবেদিতার কোন বিপদ হলে ওর পাশে থেকো। আর তাই আমি তোমার বিপদে ওর কথা রাখতে পেরে খুব খুশি হয়েছি যে কিছু তো একটা করতে পেরেছি তোমার জন্য। নিবেদিতা তখন বলে আমার আর সত্যি কিছু বলার নেই। শুধু আমি চাই তুমি একটিবার হলেও আমার বাড়ী এসো আমি তোমার চরন দুটি ছুঁয়ে প্রনাম করবো। আসলে তুমি যে ঈশ্বরের মতো আমাদের সবাইকে রক্ষা করেছো।

আর এটাও ভাবি তোমার মতো এমন ভালো মানুষ জগতে আছে বলে ভালোবাসা নামক শব্দটি আজও পবিত্র ও শুদ্ধ। অমর তখন শুধু বলে জীবনে কোন কিছুর প্রয়োজন হলে আমায় একটিবার জানিও। জানবে আমি সব সময় তোমার পাশে ছিলাম, আছি ও থাকবো। আর এবারের পুজোটা স্বামী আর পরিবারের সকলকে নিয়ে মন ভরে আনন্দ করে উদযাপন করো। আর তোমার ভালো হোক আর তুমি সর্বদা ভালো থেকো আমি ঈশ্বরের কাছে শুধু এটুকুই প্রার্থনা করি।

পরিশেষে এটাই বলতে হয় ভালোবাসা শুধু কাছে থাকলে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমান হয়না বরংমানবিকতার দৃষ্টিতে আজও এমন অনেক অমর আছে যারা নিঃস্বার্থ মননে জগতে এমন বহু নিবেদিতাদের আজীবন নিজ হৃদয়ের মাঝে সম্মানের বেদীর আসনে ভালোবাসার প্রতিষ্ঠায় নিজ উপলব্ধির গতিপথ খুঁজে নেয় ।।

সৌজন্যে – প্রতিলিপি

ekhansangbad
Author: ekhansangbad

Related News

Also Read