সন্দীপ শ্রীবাস্তব :- আমাকে শক্ত হাতে বাজিয়ে নিবি, যেমন করে শানের উপরে মহাজনে টাকা বাজায়। বেপারী যেমন তীক্ষ্ণ চোখে দেখে নেয় মালের টুটা – ফুটা।
ভক্ত হয়েছিস বলে বোকা হবি কেন? বুঝে – সুঝে দেখে – শুনে নিবি। সন্দেহই যদি রাখবি তবে সন্ধান জানবি কি করে?
নরেন্দ্র দক্ষিনেশ্বরে এসেছে। ঠাকুরের ঘরটিতে গিয়ে দেখে, ঠাকুর নেই। কোথায় তিনি? কলকাতায় গিয়েছেন। ফিরবেন কখন? এই এলেন বলে।
তা হোক, এই সোনার সময়। দেখা যাক কেমন তাঁর সোনার উপর বিতৃষ্ণা।
ঘর ফাঁকা হতেই পকেট থেকে একটা টাকা বের করলে নরেন। ঠাকুরের বিছানার নিচে আলগোছা লুকিয়ে রাখলে। সে – তল্লাটেই আর রইল না তার পর। সিধে চলে গেল পঞ্চবটী। কেউ যেন ঘৃণাক্ষরে না টের পায়।
কতক্ষণ পরেই ফিরে এলেন ঠাকুর। দেখতে পেয়ে নরেন এগিয়ে এলেই তাড়াতাড়ি। এবার বোঝা যাবে কাঞ্চনত্যাগের মহিমা। ঘরের মধ্যে আগে – ভাগে ঢুকে ঠিক কোণটি বেছে দাঁড়িয়ে রইল চুপচাপ।
যেমন নিত্য বসেন তেমনি বিছানায় এসে বসলে ঠাকুর। কিন্তু গা ঠেকিয়েছেন কি না ঠেকিয়েছেন চীৎকার করে উঠলেন। যেন জ্বলন্ত অঙ্গারের উপরে বসেছেন এমনি দগ্ধকর যন্ত্রনা। কী হল? ত্রস্তব্যস্ত হয়ে চারদিক তাকাতে লাগল সকলে। বিষাক্ত কিছু দংশন করল নাকি? কই, বিছনায় কিছু দেখা যাচ্ছে না তো।
ঠাকুর সরে দাঁড়ালেন খাট থেকে। কাছাকাছি যারা ছিল সবল হাতে ঝাড়তল লাগল বিছানা। টং- টং করে হঠাৎ একটা আওয়াজ হল মেছের উপর। ওটা কি? ওটা একটা টাকা দেখছি না? বিছানায় এলো কি করে?
নরেন তাড়াতাড়ি চলে গেল ঘর ছেড়ে।
বুঝেছি। বুঝেছি। আনন্দে ঠাকুর বিহল হয়ে উঠলেন। তুই আমাকে পরীক্ষা করছিস। বেশ তো, নিবিই তো পরীক্ষা করে। কত পরীক্ষা করেছেন মথুরবাবু। ফাঁকা ঘরে মেয়েমানুষ ঢুকিয়ে দিয়েছেন, বলেছেন, জমিদারির খানিকটা তোমাকে লিখে দি। তোদের যার যেমন মন চায় যাচাই করে নে। যা চাই তা পাব কিনা — এ জিজ্ঞাসায় যখন এসেছিস তখন যাচাই করা ছাড়বি কেন? তোদের সকলের সন্দেহ নিরসন করে নে। চলে আয় সত্যের স্থিরতায়। সিদ্ধান্তের শান্তিতে।