Select Language

[gtranslate]
৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বুধবার ২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

।। ধাঁধার খেল ।।

দেবাশিস মজুমদার :- কলকাতার খুব কাছেই বিরাজপুরে আসার জন্য সকাল সকাল শ্রীপল্লি থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছে পারিজাতবাবুর সাথে। শ্রীপতিবাবু আর নৃপতিবাবু দিন কয়েকের জন্য পুরী বেড়াতে গেছেন। ঘুরে বেড়ানো আর তীর্থভ্রমণ দুটোই একসাথে হবে। পাশাপাশি নাকি একেবারে ব্রেনটাকে রিফ্রেশ করে আসবেন বলেই সপ্তাহখানেকের জন্য কলকাতা ছেড়েছেন দুই ভাই।


আরও অনেকেই এই মরশুমে ফাঁকতাল বুঝে বেড়াতে চলে গেছেন। তাই বলতে পারেন শ্রীপল্লি আলো করে বসে আছি আমি শ্রীযুক্ত বাদল দাশগুপ্ত। সকাল সকাল মোবাইলে পারিজাতবাবুর নম্বর ভেসে ওঠায় একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। আগেরবার যা ভূতুড়ে অবস্থায় বেপাকে ফেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার পারিজাতবাবু বললেন যেখানে যাওয়া হচ্ছে সেখানে নাকি শুধু একটা ধাঁধার সমাধান করতে হবে, ভূতপ্রেত বা ভয়টয় পাওয়ার মত কিছু নেই। একদিনের মত জামাকাপড় সঙ্গে নিয়ে চলে আসলেই হবে।

পারিজাতবাবু শ্রীপল্লির সামনে থেকেই আমাকে রিসিভ করে নেবেন। ফোনে পারিজাতবাবু এও বললেন যে এবারের মক্কেল বেশ বড়লোক। আগেরবার আমার বেশ ভালোই প্রাপ্তি হয়েছিল। তাছাড়া এখন ইনসিওরেন্সের এজেন্ট হিসাবে ভালো ক্লায়েন্টও পাচ্ছি না।

সেইরকম বুঝলে মানে শাঁসালো মক্কেল মনে হলে বেশ মোটা একটা বিমা পলিসি গছিয়ে দেওয়া যাবে পারিজাতবাবুর মক্কেল ভদ্রলোককে। এইসব ভেবেটেবে পলিসির কাগজপত্রগুলোও ব্যাগে ভরে নিলাম।


আমি পৌছনোর আগেই দেখি পারিজাতবাবু চলে এসেছেন শ্রীপল্লির মোড়ে তাই নতুন কেনা রয়্যাল এনফিল্ড বাইকটা নিয়ে। আমি বাইকের পেছনে উঠে বসতেই পারিজাতবাবু বাইকে স্টার্ট দিলেন। বি টি রোড ধরে ঘন্টা দুয়েক বাইক আরোহণ করার পর আমরা পৌছে গেলাম বিরাজপুরে। সেখানে পৌছনোর পর যে বাড়িটাতে ঢুকলাম তাকে যে পুরনো আমলের জমিদারী বলা যায় তাতে কোনও সন্দেহ নেই। সুবিশাল বাড়ি।


তবে এই বাড়িতে খুব বেশী লোকজন বসবাস করে বলে মনে হয় না। তবে মক্কেল যে শাঁসালো ব্যক্তি তাতে সন্দেহ নেই। বিমার কাগজপত্র এনে কোনও ভুল করিনি।
বাইকে থাকলে বিশেষ কথাবার্তা বলা যায় না। শুধু একবার মাঝখানে এক ধাবায় জলযোগ করার সময় পারিজাতবাবু আমাকে জানিয়েছেন যে এই মক্কেল একটা সিন্দুকের কম্বিনেশন জানতে চান যেটা নাকি একটা বিশেষ ধাঁধার মধ্যে লেখা রয়েছে। এর বেশী মক্কেলও পারিজাতবাবুকে বিস্তারিত কিছু ফোনে জানননি। একদিনের জন্য তিনি পারিজাতবাবুকে এই বিষয়ে আলোকপার করার জন্য পরীক্ষা করতে চান।

পারলে মোটা অর্থপ্রাপ্তি, না পারলে খালি হাতে ফিরতে হবে। শুধু এইটুকু জানতে পেরেছি যে মক্কেল ভদ্রলোকের নাম ব্রিজমোহন সান্যাল।


ভৃত্য স্থানীয় একজন আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল গাড়িবারান্দার কাছে। পারিজাতবাবুকে সে বাইক রাখার জায়গা দেখিয়ে দিল। পারিজাতবাবু বাইক রেখে ফিরে এলে সেই লোকটি আমাদেরকে ভেতরের বসার ঘরে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে বলল, ‘আপনারা বসুন, আমি ছোটবাবুকে খবর দিচ্ছি’।
এখানে বলে রাখা দরকার বসার ঘরে ঢোকামাত্র ভেতরের ঘর থেকে একটা কেমন যেন চেঁচামেচির আওয়াজ পাচ্ছিলাম।


মনে হচ্ছিল কোনও পুরুষমানুষ কাউকে খুব বিচ্ছিরিভাবে বকাঝকা করছেন। একটু পরেই অবশ্য আওয়াজটা থেকে গেল আর তার কিছু পরেই পাজামা-গেঞ্জির ওপর নীল ড্রেসিং গাউন পরা এক মাঝবয়সী ভদ্রলোক এসে ঘরে প্রবেশ করলেন। আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে একটু অবাক হয়ে খ্যাটখেটে রুক্ষ গলায় বললেন, ‘আপনাদের মধ্যে পারিজাত বসু কে?’


পারিজাতবাবু একটা নমস্কার জানিয়ে বললেন, ‘আমিই পারিজাত বসু, আপনিই তো ব্রিজমোহন সান্যাল। আপনার সাথেই আমার কথা হয়েছিল’।
ব্রিজমোহন সান্যাল মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে আমার দিকে একটা তাচ্ছিল্যের দৃষ্টি দিয়ে পারিজাতবাবুকে প্রশ্ন করলেন, ‘এনার পরিচয়?’
পারিজাতবাবু বললেন, ‘ইনি আমার বিশেষ বন্ধু বাদল দাশগুপ্ত। বিভিন্ন সময়ে আমাকে কাজে সাহায্য করে থাকেন। বিশেষ করে ধাঁধা সমাধানের সময় একজন কেউ সাথে থাকলে সুবিধে হয়’।


ব্রিজমোহন সান্যাল নিজে একটা সোফায় বসতে বসতে বললেন, ‘কেন, আপনার একার ঘটে ধাঁধা সমাধান সম্ভব নয়? বারোজনকে ব্যাপারটা চাউর না করলেই নয়?’
ব্রিজমোহন সান্যালের ব্যবহার অত্যন্ত রুক্ষ। পারিজাতবাবুর মত মানুষকে যেভাবে উনি কথা শোনাচ্ছেন তা আমার কল্পনার বাইরে। আমার তো গা পিত্তি এত জ্বলে উঠল যে এক ছুটে এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে ইচ্ছে করল। পারিজাতবাবু দেখলাম শান্তভাবে আগের সোফায় বসে ক্ষুব ঠান্ডা গলায় ব্রিজমোহনবাবুকে বললেন, ‘বাদলবাবু অত্যন্ত বিশ্বস্ত। এসব ক্ষেত্রে আমরা এমন কাউকেই সঙ্গে রাখি যিনি বিশ্বস্ত এবং কাজে আসতে পারেন।

তবে তাও যদি আপনার আপত্তি থাকে তাহলে আমার কিছু বলার নেই, আমরা এখনই চলে যাব, আপনি দয়া করে আমার বাইকের পেট্রল খরচাটা দিয়ে দিন’।


ব্রিজমোহন সান্যাল কিছু একটা ভাবলেন, তারপর বললেন, ‘ঠিক আছে, যে গেরোয় পড়েছি। সময় নষ্ট করার সময় নেই। ঠিক আছে আপনি আজ রাতটা চেষ্টা করুন। কাল সকালের মধ্যে ধাঁধার সমাধান না করতে পারলে কিন্তু খালি হাতেই বিদেয় হতে হবে’।


অত্যন্ত কর্কশ কথাবার্তা ভদ্রলোকের। এরই মাঝে চা-বিস্কুটের প্লেট নিয়ে একজন ভদ্রমহিলা ঘরে ঢুকলেন। তাকে দেখেই ব্রিজমোহন সান্যাল খেঁকিয়ে উঠলেন, ‘সব কাজে এত সময় লাগে কেন তোমাদের?’
ভদ্রমহিলা কোনো কথার উত্তর দিলেন না। মাথা নীচু করে চায়ের কাপ প্লেট শুদ্ধ ট্রে রেখে দিয়ে আবার ভেতরে চলে গেলেন। যদিও ভদ্রমহিলা সেই অর্থে সুন্দরী নন কিন্তু চেহারায় একটা মিষ্টতা আছে, কিন্তু আমি যেন ভদ্রমহিলার চোখের কোণে একটু জলের আভা দেখলাম।

মুখটাও দেখে মনে হল যেন বেশ হতাশাগ্রস্ত। চেহারা দেখে তো মনে হয় ইনি এই খেঁকুরে ব্রিজমোহন সান্যালের স্ত্রী হতে পারেন। এইরকম কর্কশ মানুষের বউ হলে দুঃখের যে আর শেষ থাকে না সেটা আলাদা করে বলে দিতে হয় না। এনাকেই কি ভেতরের ঘরে বকাঝকা করছিলেন ব্রিজমোহনবাবু? সেটা হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।


ইতিমধ্যে ব্রিজমোহন সান্যাল সোফা ছেড়ে উঠে গিয়ে ঘরের একপাশে রাখা টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা খাতা বের করে এনে তার একটা পৃষ্ঠা খুলে পারিজাতবাবুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘এইটে দেখুন, তবে অন্য পৃষ্ঠা উল্টাবেন না। কারণ এটা আমার বাবা মুরারিমোহন সান্যালের ব্যক্তিগত খাতা’।


পারিজাতবাবু খাতাটা নিলেন আমিও বিস্কুট মুখে পুড়ে প্রায় পারিজাতবাবুর গায়ের ওপর ঝুঁকে পড়ে খাতাটা দেখতে লাগলাম। খাতাটাতে একটা পদ্যের কায়দায় একটা ধাঁধা লেখা আছে। ধাঁধাটা হল,-
‘মারাদোনার গোল, হাতের নতুন বোল;
তারপরেতেই ভেলকি, বাঁ পায়ে ম্যাজিকের ফুলকি
সেই বিশ্বকাপ, তাতে মারাদোনার ছাপ।


জার্সির জ, খগেনের ন আর মারাদোনার ম
তা ধিন ধিন ধি,
রিক্সা করে যাবি,
খগেন মিত্তিরের ঝি’।
সবই তারই পাওনা,
কিছু ছেড়ে যেওনা।
ঘনিয়ে এল ঘুমের ঘোর, গানের পালা সাঙ্গ মোর;
নয়দিন পর উঠল বোল, এল এবার আবোল তাবোল’।
বিষয়টা আমার মাথার ওপর দিয়ে গেল। পারিজাতবাবু তার মোবাইলে ধাঁধাটার ছবি তুলে রেখে খাতাটা ব্রিজমোহনবাবুকে ফেরত দিয়ে দিলেন।

খাতাটা হাতে নিয়ে সেটাকে যথাস্থানে রেখে ব্রিজমোহন সান্যাল ড্রয়ারে এবারে চাবি দিয়ে বন্ধ করে দিলেন। তারপর চাবিটা পাশের ফুলদানির মধ্যে রেখে আমাদের কাছে এসে বললেন, ‘চলুন এবার সিন্দুকটা দেখাই’।


ব্রিজমোহনবাবুর পিছন পিছন পারিজাতবাবু আর আমি পাশের একটা ঘরে গিয়ে ঢুকলাম। ঘরটা কিছুটা লাইব্রেরী গোছের। ঘরের চারিদিকের দেওয়ালে পৃথিবীর প্রথিতযথা বেশ কিছু ফুটবলারের ছবি। পেলে, মুলার, বেকেনবাউয়ার থেকে শুরু করে রোমারিও প্রমুখের ছবিও আছে। তবে ঘরের প্রায় সিংহভাগ জুড়ে আছে মারাদোনার ছবি। সারা দেয়াল জুড়ে বিভিন্ন কায়দায় বল নিয়ে, বল ছাড়া বিভিন্ন এক্সপ্রেশনের মারাদোনার ছবি। চারদিকের দেয়ালের সামনে অনেক বইয়ের আলমারি।

ঘরটা বেশ বড়। তার মধ্যে বেশ অনেকটি বইয়ের আলমারি আছে। অনেক বিষয়েরই বই আছে। তার মধ্যে একটা বড় আলমারি জুড়ে শুধু সুকুমার রায়ের বই। সুকুমার রায়ের লেখা প্রায় সব বইই সেখানে আছে। আবোল-তাবোলেরই তো প্রায় পাঁচটা এডিশন রয়েছে আলমারির কাঁচের পাল্লা দিয়ে দেখলাম।

এবারে ব্রিজমোহন সান্যাল পারিজাতবাবুকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘এই হচ্ছে আমার বাবার পাগলামো। বুড়ো হয়েও শিশুর মত ছিলেন। ফুটবলভক্ত ছিলেন আর ফুটবল মানেই বুঝতেন মারাদোনা। আর এদিকে সুকুমার রায়ের ভক্ত। সাহিত্যপ্রেমী ছিলেন কিন্তু বুড়ো বয়সেও দেখতাম আবোল-তাবোল, পাগলা-দাশু, হ য ব র ল, সুকুমার সমগ্র এগুলো পড়তে পড়তে একা একাই হো হো করে আসছেন’।


ব্রিজমোহনবাবুর কথা শুনে তার বাবা মুরারিমোহনবাবুকে বেশ আমুদে লোক বলেই মনে হল। তার ছেলে হয়ে ব্রিজমোহনবাবু এমন রামগরুড়ের ছানা কি করে হলেন কে জানে?
ব্রিজমোহনবাবু আবার বলতে শুরু করলেন, ‘আমার মামাবাড়ি ছিল পুরোদস্তুর ব্যবসাদার বংশ। তারা অবাঙালি। বাবা-মায়ের সেই যুগের লাভ ম্যারেজ হলেও বিয়ের পর বাবার এই শিশুসুলভ হাবভাব মায়ের ভালো লাগেনি। আমার ছোটবেলাটা মামাবাড়িতেই কেটেছে। আমিও তাই পুরোদস্তুর ব্যবসাদার মানসিকতার মানুষ।

মা অবশ্য আমার কৈশোরেই মারা যান। তখন আমি আবার আমার বাবার কাছে ফেরত আসি। তবে বাবার বেশ কিছু জিনিস আমি মেনে নিতে পারিনি। যাই হোক বাবা মৃত্যুর আগে আরেকটি পাগলামো করে যান। ঐ দেখুন ঐ যে সেই সিন্দুক’।


ব্রিজমোহনবাবু যেদিকে নির্দেশ করলেন সেদিকে একটা বেশ বড় মজবুত পুরনো আমলের সিন্দুক রয়েছে। তার সঙ্গে রয়েছে বিরাট একটা কম্বিনেশন হইল। পারিজাতবাবু সেই চাকাটা ভালো করে দেখে বললেন, ‘এ তো মশাই কামান দাগলেও ভাঙবে না’।


ব্রিজমোহনবাবু একটা বাঁকা হাসি হেসে বললেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তৈরি জার্মান সিন্দুক। আমার ঠাকুর্দা এনেছিলেন ইউরোপ থেকে। একটা কম্বিনেশন কোড রয়েছে। চারভাগে চারটে করে মানে ষোলো ডিজিটের কোড সেটা। সেটা অনুযায়ী ওই চাকাটা ঘোরাতে পারলে সিন্দুকটা খুলবে। আর বাবা সেই কোড নাম্বারটাই লুকিয়ে রেখেছেন খাতায় লেখা ওই ধাঁধায়। বাবার সঞ্চয় করা বেশ কিছু টাকা এমনকি এই বাড়ির দলিল এমনকি তার উইল পর্যন্ত ওই সিন্দুকের মধ্যে রেখে গেছেন তিনি। ওটা খুলতে না পারলে আমার সব লোকসান হয়ে যাবে। তাই আপনাকে ডাকা।

তবে হ্যাঁ একরাত্তিরের বেশী আমি সময় দেব না। এর আগেও কয়েকজন চেষ্টা করেছেন কিন্তু সফল কেউ হননি। বাবা সবকথাই ওই খাতায় লিখে রেখে গেছেন, শুধু কোড নম্বরটাই যা লেখেননি’।


পারিজাতবাবু এবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘আচ্ছা ঐ ধাঁধাটায় দেখলাম খগেন মিত্তির নামের উল্লখ রয়েছে, আপনি জানেন খগেন মিত্তির কে?’
দরজার বাইরে একটা শব্দ হল, মনে হল কেউ যেন দরজার আড়াল থেকে আমাদের কথা শুনছিল। সেদিকে তাকিয়েই চোয়াল শক্ত হয়ে গেল ব্রিজমোহনবাবুর।

তারপর বললেন, ‘খগেন মিত্তির, এককালে বাবার ব্যবসায়ের পার্টনার ছিলেন। অনেককাল হল মারা গেছেন। যাই হোক আপনারা বিশ্রাম করুন। নকুল আপনাদের ঘর দেখিয়ে দেবে। আমার একটু কাজ আছে’। এই বলে কেমন যেন ঝড়ের মত ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন ব্রিজমোহনবাবু। আমার মনে হল কে বাইরে থেকে নজর রাখছিল সেটা ব্রিজমোহনবাবু বুঝতে পেরেই অমন ক্ষেপে গেলেন। আবারও ভেতর মহল থেকে চিল্লামেল্লির আওয়াজ পাওয়া গেল।

দুবারই যেন একটা নারীকন্ঠের আর্তনাদ শুনলাম। ব্রিজমোহনবাবু কি তবে সেই ভদ্রমহিলা মানে যিনি সম্ভবত তার স্ত্রী তাকে মারধরও করেন? কিন্তু কেন?’ এটা তবে পরিষ্কার হল মুরারিবাবুর সঙ্গে তার ছেলের বিন্দুমাত্রো চরিত্র কোনও মিল নেই। একটু পরেই সেই আগের চাকরটি, যার নাম জানলাম নকুল, সে এসে আমাদেরকে আমাদের থাকার ঘর দেখিয়ে দিল।
বাড়ির দোতলায় একটা ঘর দেওয়া হয়েছে আমাদের। ঘরের দু’দিকে দুটো সিঙ্গল বেড। এমনিতে ঘরটা খোলামেলা। থাকার পক্ষে বেশ ভালোই। কিন্তু দুপুরের খাওয়াদাওয়াটা মোটেই ভালো হল না। না রান্নার স্বাদ ভালো, না রান্নার পদে কোনও বৈচিত্র ছিল। খাওয়ার দেওয়াও হয়েছিল আমাদের ঘরেই। দুপুরে একটু গড়িয়ে নিয়ে বিকেল থেকেই খাতা পেন্সিল বের করে পারিজাতবাবু ধাঁধা সমাধান নিয়ে বসলেন। আমার হাতে নিজের মোবাইলটা ধরিয়ে ধাঁধাটার ডিকটেশন দিতে বললেন, আমার ডিকটেশন অনুযায়ী খাতায় লিখে নিলেন ধাঁধাটা।


তারপর বার বার করে ধাঁধাটা আউরাতে আউরাতে খাতার পাতা উল্টাতে উল্টাতে কিসব নাম্বার লিখতে লাগলেন।
আমি আর কি করব বেশিরভাগ সময় শুয়ে বসে মোবাইল গেম খেললাম। মাঝেমাঝে পারিজাতবাবু যখন কিছু জানতে চাইছিলেন বা হুকুম করছিলেন সেগুলো ওনাকে বলে দেওয়ার বা হাতে হাতে এটা সেটা এগিয়ে দেওয়ার কাজ করছিলাম। সারা সন্ধ্যেতে ব্রিজমোহনবাবু আর আমাদের কাছে আসেননি। বা অন্য কেউও আর এদিকে আসেননি। দু’একবার অবশ্য ব্রিজমোহনবাবুর চড়া গলার আওয়াজ পেয়েছিলাম, এই পর্যন্তই।
রাত প্রায় ন’টা নাগাদ রাতের ডিনার এসে গেল। কেউ আমাদের কাছে খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে আমাদের পছন্দ অপছন্দের কথা কিছু জানতেও চায়নি। যেন দয়া করে আমাদের খাওয়ার দেওয়া হচ্ছে।

দুপুরে ভাত দিলেও রাতে দেখলাম আমাদের বিনা অনুমতিতেই রুটি আর তরকা আর তার সাথে ডিমের তরকারি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনওরকমে দুজনে তাই খেয়ে নিলাম। খাওয়ার পর পারিজাতবাবু আবার ধাঁধা নিয়ে বসলেন দেখে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কিছু উদ্ধার করতে পারলেন, নাকি সকালে খালি হাতেই ফিরতে হবে?’


পারিজাতবাবু খাতা থেকে মুখ তুলে বললেন, ‘প্রথম আর শেষ দিকটা সোজা, তবে মাঝের দিকটা একটু ভোগাচ্ছে’।
আমি মাথা চুলকে বললাম, ‘আপনি তো সোজা বলেই খালাস। আমি তো এর বিন্দু বিসর্গ কিছুই বুঝতে পারছি না’।
পারিজাতবাবু বললেন, ‘এতে না বোঝার কি আছে, প্রথম লাইনগুলোতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে ১৯৮৬-র বিশ্বকাপের কোয়ার্টারফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মারাদোনার সেই বিতর্কিত ‘হ্যান্ড অব গড’ গোলের কথা বলা হচ্ছে, এই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা জিতেছিল।

ইংল্যান্ড ম্যাচে ওই হাত দিয়ে গোলের পর মারাদোনা বিশ্বকাপের ইতিহাসের অন্যতম সেরা গোলটাও করেছিলেন। পারফরম্যান্সে, অধিনায়কত্বে দিয়েগো মারাদোনাই ছিলেন সেবার সেরা, তাই বিশ্বকাপ জুড়েই ছিল মারাদোনার ছাপ। তাই ১৯৮৬-র মেক্সিকো বিশ্বকাপে বিশ্বকাপের বছর সংখ্যা অর্থাৎ ১৯৮৬ হচ্ছে প্রথম চারটি সংখ্যা। আর শেষের দিকে ‘ঘনিয়ে এল ঘুমের ঘোর, গানের পালা সাঙ্গ মোর’, এটি সুকুমার রায়ের নিজের লেখা। এখানে সুকুমার রায়ের মৃত্যুর তারিখের কথা বলা হচ্ছে, অর্থাৎ কিনা ১০ সেপ্টেম্বর ১৯২৩ আর এই তারিখের ঠিক নয়দিন পর অর্থাৎ ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯২৩ তারিখে তাঁর লেখা ‘আবোল তাবোল’ ইউ রায় এন্ড সন্স থেকে প্রথম প্রকাশ পায়।

তাহলে শেট আটটা সংখ্যা দু’ভাগে হবে ১৯ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ ১৯০৯, এখানে চারসংখ্যা দরকার বলে নবম মাসকে শুধু ৯ না বলে ০৯ হিসাবে ধরতে হবে আর সুকুমার রায়ের মৃত্যু সালের চারটে সংখ্যা অর্থাৎ ১৯২৩। অর্থাৎ ১৯০৯ আর ১৯২৩। বুঝলেন?’
আমি কিছুক্ষণ হাঁ করে থাকলাম। মনে মনে পারিজাতবাবুর বুদ্ধির তারিফ না করে পারলাম না। তারপর বললাম, ‘এই যে জার্সির জ……’ এই ব্যাপারটা ঠিক কি?’
পারিজাতবাবু হেসে বললেন, ‘শব্দ থেকে কোন কোন অক্ষর ধরতে হবে সেটা বলা হয়েছে। স্টাইলটা অবশ্য হ য ব র ল থেকে নেওয়া, কিন্তু এক্ষেত্রে মানে আছে। জার্সির জ, খগেনের ন আর মারাদোনার ম নিয়ে পরপর সাজান, হবে জনম অর্থাৎ জন্ম। এবার তার নীচের তিনটে লাইনের প্রথম শব্দগুলোর প্রথম অক্ষর নিন অর্থাৎ তা রি এবং খ, হল তারিখ। অর্থাৎ জন্ম তারিখ। কিন্তু কার জন্ম তারিখ?

সুকুমার রায় আর মারাদোনা দুজনের জন্ম সাল অনেকটাই আগে পড়ে কিন্তু দুজনেরই জন্ম তারিখ এক অর্থাৎ ৩০ অক্টোবর, মানে সংখ্যায় লিখলে ৩০১০। তাহলে কম্বিনেশন দাঁড়াচ্ছে ১৯৮৬ ৩০১০ ১৯০৯ ১৯২৩’।
আমি হাততালি দিয়ে বলে উঠলাম, ‘তাহলে তো মশাই কেল্লা ফতে। এখনও তো খুব বেশী রাত হয়নি। এখনই চলুন ব্রিজমোহনবাবুকে কম্বিনেশন বলে দিয়ে ওনার কাছ থেকে দক্ষিণা নিয়ে সকাল সকাল কেটে পড়ি। এদের রান্নাবান্না বড় খারাপ’।


পারিজাতবাবু খাতা ছেড়ে নিজের শরীরটাকে বিছানায় এলিয়ে দিয়ে বললেন, ‘কিন্তু এই খগেন মিত্তির বিষয়টা ভীষণ ভাবাচ্ছে…ইনি ঠিক কে, কাকে কিছু ছেড়ে যেতে মানা করা হচ্ছে?’
আমি এবার ঝাঁঝিয়ে বললাম, ‘আপনার অতশত চিন্তার কি প্রয়োজন মশাই। কাজ হয়ে গেছে। মালকড়ি বুঝে নিয়ে কেটে পড়লেই হল। আদার ব্যাপারীর অত জাহাজের খোঁজের কি দরকার?’


পারিজাতবাবু এবার কাত হয়ে শুয়ে বললেন, ‘দরকার আছে বাদলবাবু দরকার আছে। সুকুমার রায়ের সুপুত্র সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্ট গোয়েন্দা প্রদোষচন্দ্র মিত্র ওরফে ফেলুদা কিন্তু এই ব্যাপারটাও তলিয়ে ভাবতেন। ফেলু মিত্তিরও কিন্তু খগেন মিত্তিরের কথা সবটা না জেনে কম্বিনেশন নম্বরটা হ্যান্ডওভার করতেন না। তাছাড়া একটা কথা বলুন যদি কেউ তার নিজের ছেলেকে সবকিছু দিয়ে যেতে চায় তাহলে এত রহস্য করে ধাঁধা হেয়ালি তৈরি করবে কেন? জটিলতা আছে মশাই আর সেটাই আমাকে ভাবাচ্ছে’।


ঠিক এই সময়েই একটা বড় শোরগোল উঠল। ব্রিজমোহনবাবুর চড়া গলা শোনা গেল, সবকথা আমরা শুনতে না পেলেও এটুকু স্পষ্ট শুনলাম, ‘উইলটা হাতে এসে গেলে একেবারে ঘাড় ধরে বের করে দেব’। তারপরই মনে হল একটা নারীকন্ঠের কান্না শুনতে পেলাম। আমাদের ঘরের ঠিক পাশেই ছাদে ওঠার সিঁড়ি, একটু পরেই মনে হল কেউ যেন সিঁড়ি দিয়ে ওপরের দিকে উঠে গেল। পারিজাতবাবু তড়াং করে খাট থেকে নেমে আমাকে বললেন, ‘আপনি ঘরে থাকুন মশাই, মনে হচ্ছে মিসেস সান্যাল ছাদের দিকে গেলেন। ওনার সঙ্গে একটু কথা বলা দরকার আর এটাই সুবর্ণ সুযোগ, তাছাড়া ভদ্রমহিলা যাতে উল্টোপাল্টা কিছু করে না বসেন সেটাও দেখতে হবে। আপনি ঘরে থাকুন, আমি আসছি’।


পারিজাতবাবু বেরিয়ে গেলেন। আমি বোকার মত খাটে বসে রইলাম। বেশ কিছু সময় পেরিয়ে গেল। আমি খাটে শুয়ে পড়লাম। বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর আমি একবার ভাবলাম বেরিয়ে দেখে আসি পারিজাতবাবু কোথায় গেলেন? তক্ষুণি ঘরের দরজা ফাঁক করে পারিজাতবাবু ফিরে এসে ঘরে ঢুকলেন। তার হাতে সকালের সেই মুরারিমোহনবাবুর খাতাটা। আমার জিজ্ঞাসু দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে পারিজাতবাবু বললেন, ‘ব্রিজমোহনবাবুর ফুলদানিটা বেশ ভালো লাগলো। চাবিটা বের করে খাতাটা নিয়ে আসতে সমস্যাই হয়নি। আপনি ঘরের আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ুন, আমি এদিকের টেবিলল্যাম্পটা জ্বালছি। খাতাটা আমাকে আজ রাতেই পড়ে শেষ করতে হবে’।


সকালে পারিজাতবাবুই আমাকে ডেকে তুললেন। ভদ্রলোকের চোখ দেখেই বুঝলাম সারারাত ধরে খাতাটা পড়েছেন। চোখে একটা ডার্ক সার্কেল। দুজনেই যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিলাম। এর মাঝে অবশ্য দু’বার ‘খাতায় কিছু পেলেন?’ পারিজাতবাবুকে জিজ্ঞেস করেও কোনও ফল হয়নি।
নীচে নেমে এসে দেখি বসার ঘরে ব্রিজমোহনবাবু আমাদের জন্য ওয়েট করছেন। আমাদের দেখেই বাঁকা হাসি হেসে বললেন, ‘কি কিছু সমাধান বেরল?’


পারিজাতবাবু শান্ত স্বরে বললেন, ‘বেরিয়েছে, তবে আগে আপনার স্ত্রীকে ডাকুন। যা বলার ওনার সামনেই বলব’।
‘ওকে আবার কি দরকার? আপনাকে ডেকেছি আমি, যা বলার আমাকে বলুন’। বেশ গলা চড়িয়েই বললেন ব্রিজমোহনবাবু।
পারিজাতবাবুকে দেখলাম একদম বরফের মত ঠান্ডা। শুধু নিজের ব্যাগ থেকে সেই মুরারিমোহনের খাতাটা বের করে ব্রিজমোহনবাবুর সামনে ধরে বললেন, ‘আপনি যদি মিসেস সান্যালকে না ডাকেন তাহলে আমি এই খাতাটা এখানেই ছিঁড়ে ফেলব আর কম্বিনেশন নাম্বারও আপনাকে বলব না’।
‘আপনি আমার খাতাটা……’ রেগে যেতে গিয়েও যেন নিজেকে সামলে নিলেন ব্রিজমোহন।
‘আপনার নয় আপনার বাবার খাতা, আপনি মিসেস স্যানালকে ডাকুন’, পারিজাতের গলায় হুকুমের সুর।


অগত্যা গজগজ করতে করতেই নকুলকে ডেকে তাকে দিয়ে নিজের স্ত্রীকে ডেকে পাঠালেন ব্রিজমোহন সান্যাল। মিসেস সান্যাল এলে সবাইকে নিয়ে পারিজাতবাবু এলেন বসার ঘরের পাশের লাইব্রেরী ঘরে রাখা সেই সিন্দুকটার সামনে, তারপর পারিজাতবাবু বলতে শুরু করলেন, ‘মুরারিবাবু সুকুমার রায় আর মারাদোনাকে নিয়ে এক ধাঁধা বাঁধলেও ধাঁধার মধ্যে খগেন মিত্র নামটার উল্লেখ করেছিলেন। ব্রিজমোহনবাবু আমাকে খগেন মিত্রের অর্ধেক দায়সারা পরিচয় দিয়েছিলেন। খগেন মিত্র শুধু মুরারিমোহন সান্যালের ব্যবসার অংশীদার ছিলেন না বস্তুত ব্যবসা, বাড়ি সবকিছুই ছিল খগেন মিত্রর। এক দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হওয়ার সময় তিনি এই সবকিছু নিজের বাল্যবন্ধু ও বিশ্বস্ত সাথী ও ব্যবসার পার্টনার মুরারিমোহন সান্যালের নামে লিখে দিয়ে যান এই মর্মে যে তিনি তার একমাত্র মাতৃহারা কন্যা জয়াকে নিজের মেয়ের মত মানুষ করবেন। ব্রিজমোহনবাবুর মা চেয়েছিলেন মুরারিমোহনবাবু এসব ছেড়ে তার বাপের বাড়ির ব্যবসায় যোগ দিন। কিন্তু মুরারিবাবু বন্ধুকে দেওয়া কথা ফেলতে পারেননি।


তিনি স্ত্রীপুত্রকে ছেড়েও বন্ধু কন্যা জয়াকে পিতৃস্নেহে মানুষ করেন। পরে কিছুটা ব্রিজমোহনের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই জয়ার সঙ্গে মুরারিমোহন জয়ার বিয়ে দেন। ব্রিজমোহন সম্পত্তির লোভে তখনকার মত সেটা মেনে নিলেও উনি নিজের বাইরের ব্যভিচার ছাড়েননি। জয়াদেবীর প্রতি ওনার আক্রোশ ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এটা মুরারিমোহনবাবু বুঝতে পারেন। তাই তিনি জয়াদেবীকে সুরক্ষিত করার জন্যই তার উইল যেখানে তিনি জয়াদেবীকে সব সম্পত্তি ফিরিয়ে দিয়ে গেছেন, বাড়ির দলিল এবং আরও নানাজিনিস এই সিন্দুকে রেখে একটা ধাঁধা তৈরি করে রেখে যান। কিন্তু যে খাতায় তিনি এটা লিখেছিলেন সেটা দৈবাৎ ব্রিজমোহনবাবুর হাতে পড়ে যায়। জয়াদেবীর আগে তাই ব্রিজমোহনবাবু নিজে সিন্দুকে কি আছে দেখতে চেয়েছিলেন। প্রয়োজনে তিনি আসল উইল গায়েব করে নকল উইল তৈরির চেষ্টা করতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য এই খাতা পড়ে আর গতকাল রাতে সুযোগ বুঝে জয়াদেবীর সঙ্গে কথা বলে আমি সব বুঝতে পেরে যাই’।
ব্রিজমোহনবাবু কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু তাকে এক ধমকে থামিয়ে দিয়ে ১৯৮৬ ৩০১০ ১৯০৯ ১৯২৩ নম্বরে চারভাগে হাতল ঘুরিয়ে পারিজাতবাবু সিন্দুকটা খুলে ফেললেন। তারপর টাকা গয়না সব ছেড়ে সিন্দুক থেকে দুটো দলিলের কাগজ বের করে মিসেস জয়া সান্যালের হাতে দিয়ে বললেন, ‘আপনার শ্বশুরমশাই সবকিছু আপনাকেই দিয়ে গেছেন, আপনি এগুলো পড়লেই বুঝতে পারবেন আমার কথা মিথ্যা নয়। আর এগুলো সব আপনার বাবা খগেন মিত্ররই সম্পত্তি।

আপনার শ্বশুরমশাই আপনার ন্যায্য পাওনা ফিরিয়ে দিয়েছেন। আপনি চাইলে আপনার স্বামীকে বাড়ি থেকে বের করেও দিতে পারেন। প্রয়োজনে আইনের সাহায্যও নিতে পারেন। মুখ বুঁজে অত্যাচার সহ্যের কোনও দরকার নেই’।
জয়াদেবী চোখ উঁচু করে তাকালেন। তার চোখে যেন নতুন শক্তির দীপ্তি দেখা গেল। তিনি ব্রিজমোহনবাবুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন, ‘আমি অনেক কষ্ট সহ্য করে চেষ্টা করেছি যাতে তুমি শোধরাও। কিন্তু তোমার কোনও পরিবর্তন হয়নি। এরপরও যদি তুমি না ভালো হও তাহলে আমি কিন্তু অন্য ব্যবস্থা নেব’।
পারিজাতবাবু জয়াদেবীকে নিজের কার্ড দিয়ে জানালেন যে যেকোনও সমস্যায় জয়াদেবী তার কাছে সাহায্য চাইতে পারেন। আমরা চলেই আসছিলাম কিন্তু জয়াদেবী পারিজাতবাবুকে তার প্রাপ্য পারিশ্রমিক ওই সিন্দুকের টাকা থেকে একেবারে নগদ অর্থেই দিলেন। এই প্রথম দেখলাম নিয়ম ভঙ্গ করে পারিজাতবাবু চেকে নয় ক্যাশে নিজের পারিশ্রমিক নিলেন। এতে অবশ্য আমার সুবিধেই হল। আমিও নগদ নারায়ণেই আমার ভাগ পেয়ে গেলাম। যখন বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসছি তখন একবার ব্রিজমোহনবাবুর মুখের দিকে তাকালাম। মারাদোনার গোলের পর বিপক্ষ গোলকিপারদের মুখ যেমন দেখাতো সেইরকম মানে অনেকটা যেন ওই হুঁকোমুখো হ্যাংলার মতই ব্রিজমোহনবাবুর মুখটা দেখালো।

ekhansangbad
Author: ekhansangbad

Related News

Also Read