স্বামী ঈশানানন্দ :- কলিকাতা হইতে মা একবার কেদারবাবুকে পত্র লেখেন, “তোমরা যদি কোয়ালপাড়ায় আমার জন্যে একখানা ঘর করে রাখতে পার ,তাহলে দেশে গিয়ে মাঝে মাঝে তোমাদের ওখানে থাকি। “
এই পত্র পাইয়া আমরা নিজেরা চেষ্টা করিয়া তাঁহার জন্য একটি বাড়ি প্রস্তুত করি। উহাই “জগদম্বা আশ্রম “।
মা তথায় প্রথম বার প্রায় একপক্ষ কাল বাস করিয়া জয়রামবাটী যান। শেষে একদিন বিকালে তাঁহার দ্বিতীয়বার আসিবার দিন স্থির হইল। আমরা পালকি ঠিক করিয়া রাখিলাম।
কিন্তু ঐ দিন সকাল হইতে মুষলধারে বৃষ্টি আরম্ভ হইল। নদীতে খুব জল বাড়িয়াছে, খবর আসিল। তথাপি কেদারবাবু বলিলেন, “তোমরা তাঁর আদেশ
মতো পালকি নিয়ে যথাসময়ে উপস্থিত হও, তারপর মা যেমন বলেন তেমনি করো। “
নদীতে আসিয়া দেখিলাম সাঁতার জল। রাজেন মহারাজ সাঁতার দিয়া ওপার হইতে ডোঙা লইয়া আসিলেন এবং পালকি সহ আমরা পার হইয়া বেলা তিনটা আন্দাজ জয়রামবাটী পৌঁছিলাম।
কালী মামা আমাদিগকে ভর্ৎসনা করিয়া বলিলেন,
“তোমরা এই বাদলে কি বলে দিদিকে নিতে এলে?”
মা একটু একটু হাসিতেছেন।
রাজেন দাদা বলিলেন, “আমাদের কি সাধ্য আছে যে মাকে নিয়ে যাই বা সেবা করি! আজ পালকি নিয়ে আসব বলে গেছি, তাই এসেছি। “
মা তখন হাসিয়া বলিলেন, “তোমরা কথা রাখতে পার, আর আমি বুঝি পারি নে?আমি একাই পালকিতে যাচ্ছি। আমাকে নিয়ে চল। ওরা সব পরে যাবে। “
তখন আমরা হার মানিয়া বলিলাম, “না, মা, তা কি হয়?এই বাদলে কেউ বাড়ির বার হতে পারছে না, আর আপনাকে ভিজিয়ে নিয়ে গিয়ে অসুখ করাব?”
তখন কালীমামা ও মা খুব হাসিতে লাগিলেন। আমরা পালকি লইয়া আশ্রমে ফিরিয়া
আসিলাম।
কিন্তু মা তাহার পরেই অসুস্থ হইয়া পড়ায় কয়েক মাস পরে কোয়ালপাড়া আসেন।