পল্লব দাস : – রাত তখন ১২.৩০ টা।
বেশ কিছুদিন ধরে রোজ এই সময় কলটা আসছে শ্রীময়ীর ফোনে।
ধরার সাথে সাথেই একটা যান্ত্রিক শব্দ মূর্ছনায় কান ফেটে যাওয়ার যোগাড়।
শ্রীময়ী ওর এক বন্ধুকে বলেছে ঘটনাটা, সেই বন্ধু মানে তপন আবার কাজ করে পুলিশের সাইবার সেলে।
তপন ওকে বলেছিলো, শ্রী, তুই ফোনটা কাটবি না, কলটা ট্রেস করতে আমার ২ মিনিট সময় লাগবে, তোর ফোনে আমি ট্রাকিং জেনারেট করে দিচ্ছি, তোর কাছে কল এলেই আমি অ্যালার্ট হয়ে যাবো, তুই ফোনটা ধরেই থাকবি, আমি পুরো ফোর্স নিয়ে খুঁজবো, চাপ নিস না।
শ্রী বলেছিলো, বিশ্বাস কর, ফোনের শব্দটা ভয়ানক, মনে হয় কোনো রোবোট আমার কানের ভীতরের পর্দাটায় ব্লেড চালাচ্ছে আর তখন আমার মাইগ্রেনের ব্যাথাটা পুরো বাঁ কাঁধ জুড়ে থাকে।
তপন বলেছিলো, চাপ নিস না, শুধু ফোনটা ধরে থাকিস।
এখন ঠিক রাত ১২.৩০ টা।
ফোনের রিং বাজলো,রিংটোন, হর হর শম্ভু,শিব মহাদবা, সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা ধরলো শ্রীময়ী।
অপরদিকে ভয়ানক যান্ত্রিক শব্দ, ফোনটা কান থেকে নামিয়ে স্পিকারে দিলো শ্রীময়ী,
টক টক টক…..
ট্রিক ট্রিক ট্রিক….
শব্দটা যেনো বেড়েই চলেছে।
হঠাৎ আওয়াজটা থেমে গেলো,
অপরদিক থেকে তপনের আওয়াজ,
শ্রী, পেয়ে গেছি রে, তোর চেনা লোক,
শ্রীইইইইইইই………
চারিদিকে এক ভয়ানক নৈঃশব্দ্য।
ভয়ে বুকটা ছ্যাত করে উঠলো শ্রীময়ীর, কি হলো তপনের?????
শ্রীময়ী চিৎকার করে উঠলো, ততততপপপপনননন?????
তপন এবার যান্ত্রিক স্বরে বললো,
শ্রী, রাজেশকে মনে আছে???রাজেশ রে, আমাদের সাথে স্কুলে পড়তো, তুই ওর সাথে যা বাজেটাই না করেছিলি??
মনে পড়ছে???
শ্রীময়ীর মনে পড়ে গেলো,আজ থেকে প্রায় ১২ বছর আগে,
ও তখন ক্লাস সেভেনে পড়ে, অন্য স্কুল থেকে ট্রান্সফার নিয়ে রাজেশ ওদের স্কুলে এসেছিলো।
রাজেশকে কোনোদিনই তার পছন্দ হতো না, ও এসেই প্রথম পরীক্ষায় হয়ে গিয়েছিলো ক্লাসের টপার, আর ওর জন্যই শ্রীময়ী ফার্স্ট পজিশন থেকে সেকেন্ডে চলে গেছিলো।
এই রাগ থেকেই একটা জোর নাটক করেছিলো শ্রীময়ী, হেডস্যারকে বলেছিলো রাজেশ ওকে রাতে ম্যাসেঞ্জারে কল করে বিরক্ত করছে,নোংরা মেসেজ করছে, আর এই নাটকে তপন হয়েছিলো শ্রীময়ীর তুরুপের তাস।
ছোট থেকেই তপন মোবাইল-কম্পিউটারে পারদর্শী ছিলো, তাই ওর খুব একটা অসুবিধা হয়নি রাজেশের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে শ্রীময়ীকে রাতে রাজেশের অ্যাকাউন্ট থেকে বিরক্ত করতে।
হেডস্যার মেসেজগুলো দেখে বেধড়ক মেরেছিলো রাজেশকে, ওর কোনো কথাই কেউ শোনেনি সেদিন।
শ্রীময়ী এবার তপনকে বললো, মনে পড়েছে রে, আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি রাজেশের কাছে, ফোনটা ওকে দে।
বেশ খানিকক্ষণ নিস্তব্ধতার পর,
১২ বছরের আগের গলায় রাজেশ বলে উঠলো, শ্রীময়ী, সেদিনের পর থেকে আমি আর কাউকে মুখ দেখাতে পারিনি, বাড়ির লোক মিসিং ডায়েরি করেছিলো, পুলিশও খুঁজে পায়নি।যদি তোদের বাড়ির কাছের শ্মশানঘাটে খুঁজতো, পেয়ে যেতো।
আঁৎকে উঠলো শ্রীময়ী, মানে???
-মানে, তোর কাঁধে মাঝে মাঝে ব্যাথা ওঠে না???তুই তো ভাবতিস মাইগ্রেন বোধহয়, ওটা আমার হাঁত ছিলো, অপেক্ষা করছিলাম আজকের দিনটার, তোকে আজ তপন প্রোপোজ করবে ভেবেছিলো, আর আজই ও আমার সাথী হয়ে গেলো রে, শ্রীময়ী,এখন কটা বাজে রে??
সেদিন আমার নামে বদনাম দিয়েছিলি যে আমি তোকে রাত ১২.৩০ টায় বিরক্ত করি, এই এতোক্ষণ কথা বলার পরেও ঘড়িটা দ্যাখ, ১২.৩০ টাই বেজে আছে।
শ্রীময়ী, এতোদিন তোর একটা কাঁধে চাপ লাগতো, আজ দুটো কাঁধে দুজনের চাপ অনুভব করছিস????
সৌজন্যে – প্রতিলিপি