Select Language

[gtranslate]
৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বুধবার ২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

।। আগুন ।।

শর্মিষ্ঠা গঙ্গোপাধ্যায় :- ইতিমধ্যেই সবাই ডাকাডাকি করতে লেগেছে।সব্বাই বিয়েবাড়ি যাওয়ার জন্য একেবারে রেডি। নতুন বৌ পামেলা ও পরিপাটি হয়ে সদ্য বিয়েতে পাওয়া বেনারসী পড়ে রেডি। ঋজু তো আড়চোখে বৌ কে দেখেই যাচ্ছে। অপূর্ব সুন্দরী না হলেও পামেলার মধ্যে একটা আলগা শ্রী আছে।শ্যামলা রঙা মুখে ওর ঐ ভাসা ভাসা মুখখানি ঢলঢল মুখে যেন একটা সৌন্দর্য এর ছাপ ফেলে যায়। কিন্তু রূপা কই।তার এখনও দেখা নেই।”কি হলো ছোটবৌ রূপা আসছে না কেন?সেই বেহালা যেতে হবে।এখন ই না বের হলে তো পৌঁছতেই দেরি হয়ে যাবে। ওকে ডাক দাও।”বেশ চিন্তিত মুখে ভাইয়ের বৌকে আদেশ দিলেন বাড়ির কর্তা প্রদীপ বাবু।”দাদা,রূপা এখনও রেডি ই হয় নি, ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে আছে।”ভাশুরের কথায় মুখ নীচু করে উত্তর দেয় কল্যানীদেবী।স্ত্রীর কথায় মাথা গরম হয়ে ওঠে প্রণববাবুর।বলে,”কি,ও ঘরে দরজা বন্ধ করে বসে আছে, কিন্তু কেন? স্বামীর দিকে তাকিয়ে,”ওর জামা পছন্দ হচ্ছে না।”আরও রেগে প্রণববাবু,”তবে ও ঘরেই থাক,যেতে হবে না, বারবার বলি মেয়েকে প্রশ্রয় দিও না দিও না। সবসময়ই ওর জেদ,রাগ, অসন্তোষ।আর তোমার জন্য ই হয়েছে এটা।”ভাইকে আশ্বস্ত করে প্রদীপবাবু বলেন,”আঃ,থাম থাম,তা এতো তো জামা কিনল পূজোতে,তার ই একটা না হয় পড়ুক আজ….।”সাথে সাথে স্বামীর কথার খেই ধরে অনুপমা দেবী বলেন,”হ্যাঁ রে ছোট,ঐযে ঋজু যে শাড়িটা দিল রূপাকে পূজোতে পামেলার শাড়ির মতো,ওটা ই পড়ুক না,বড্ড সুন্দর।”কল্যানী দেবী,”না ঐটা পড়বে না,কি জানি কি করবে,ঘর আটকে বসে বসে কাঁদছে।”দেওর ঝির কান্নার কথা শুনে বুঝি জেঠিমার ও বুকটা কেঁদে উঠলো,”সে কি!”বলে হাহা করে ছুটে গেল রূপার ঘরে। তারপর সবাই মিলে অনেক হাঁক ডাক করে,অনুনয় বিনয় করে এমনকি আবার নতুন শাড়ি, নতুন সালোয়ার পর্যন্ত ওকে কিনে দেওয়া যাবে এরকমই শর্ত সাপেক্ষে শেষমেশ যখন রূপা রাণী দরজা খুললেন তখন মেয়ের মুখের অবস্থা দেখে মা জেঠিমার মার চোখে জল চলে এলো।কল্যানী দেবী স্বামী কে দায়ী করলেন,”সত্যি তো কখনও মেয়েটাকে কিছু ভালো কিনে দিয়েছো? এখন কলেজে যাচ্ছে, এদিকে ওদিকে যায়,সবার দেখে,ওর ও ইচ্ছে করতেই পারে”।জেঠিমা অনুপমা দেবী,”তবে রুপু,তুইইই বল কি পড়তে চাস,তোর বৌদির কোনো সালোয়ার,শাড়ি পরবি?তোর যা ইচ্ছে সেটাই হবে।”অনেক তোষামোদের পর, চোখ মুছে রূপা একটু ধাতস্থ হয়ে,”হম্,দেখি বৌদির নতুন কি কিছু আছে? আজকে পড়ার মতো।”যাক্ মেয়ে কথা বলেছে,কান্না থেমেছে,আর কি চাই। অনুপম দেবী,”যা না,যা,তুই নিজেই উপরে গিয়ে বৌদির আলমারি থেকে যেটা ইচ্ছে নিয়ে নে।”অতঃপর পামেলা নিজের আলমারি টি রূপার দুই ললুব্ধ চোখের সামনে মেলে দিল আর রূপা রাণী একটা শাড়ি,আর বিয়েতে পাওয়া গোটা দুই সালোয়ার এর নতুন পিস নিয়ে নাচতে নাচতে নীচে নেমে এলো।”জেঠিমা এটা পরি আজ?”বলে পামেলার সদ্য পূজোতে পাওয়া জামরঙা জামদানি খানি দেখালো।অন্য হাতে দুটো সালোয়ারের পিস নাচিয়ে বললো এ দুটো নিলাম।আমি কলেজে পরে যাবো।এক গাল হেসে জেঠিমা অনুপমা দেবী,”হ্যাঁ হ্যাঁ নে,তোর যা ইচ্ছে নে,সব তোর ই তো।আর ঐ শাড়িটিও তোর বুঝলি,ও আর বৌদি কে দিতে হবে না। বৌদির প্রচুর আছে।”অন্যদিকে মেয়ের হাতে শাড়ি সালোয়ারের স্তুপ দেখে চোখ চকচক করে উঠলো কল্যানী দেবীর। মেয়েটা সব যেন পায়, এ যে আপামর সব মায়েদের ই কাঙ্খিত চাহিদা।এ তে দোষ কি! অতঃপর সবাই বিয়েতে গেল। আনন্দ করলো। পামেলা ও আনন্দ করলো বৈকি। শুধু রাতে যখন ঋজুর বুকে মাথা রাখলো,ঋজু যখন বললো,”মন খারাপ কোরো না,তোমায় ওরকম শাড়ি আমি আরও অনেক কিনে দেবো। তখন স্বামীকে আরেকটু কাছে গভীর ভাবে জড়িয়ে বললো,”ধুর আমার লাগবে না।”মুখে বললো বটে, কারণ আর কোন শাড়িই যে ঐ শাড়ির মতো ওর কাছে হবে না।ঐ জামরঙা জামদানি টি পামেলার কাজ বিশেষ।ঐটাই ওর বিয়ের পর প্রথম পুজোয় পাওয়া স্বামীর কাছ থেকে প্রথম উপহার।ওটার ওপর ওর একটা আলাদা টান ছিল, ভালোবাসার টান।

সংসার এর চোরা রাজনীতির সর্পিল গতি যে কোন দিকে ছুটে চলবে,কেউ জানে না। মনের বহুবিধ জটিল গতি প্রকৃতি ই চোরাগলির একমাত্র পথপ্রদর্শক।যে অন্ধকার থেকে আরো অন্ধকারে নিয়ে ফেলে । এখানে ও হলো তাই। হতে হয়তোবা আরও অনেককিছুই পারতো, কিন্তু শেষ পর্যন্ত রূপার এই উত্তরোত্তর জেদ, অসহিষ্ণুতা, অসন্তোষ ই যতো দিন যেতে লাগলো অনুপমা দেবীর পামেলার সাথে নিঃশব্দ বিপ্লব এর একটা মস্ত বড় হাতিয়ার হয়ে উঠতে লাগলো।কারণ ধীরে ধীরে তিনি উপলব্ধি করছেন ছেলে কেমন যেন বৌ অন্ত প্রাণ হয়ে উঠেছে।এ যে মেনে নেওয়া যায় না। তবে তো বৌ সাপের পাঁচ পা দেখবে।তবে কি আর শাশুড়ি বলে মান্যি করবে? নিজের সংসারে যে নিজের ই অস্তিত্বের সংকট দেখা দেবে তখন। সুতরাং মনের অগোচরে ই অনুপমা দেবী নিজের মনের গোপন ঈর্ষা চরিতার্থ করতেই রূপাকেই দাঁড় করালো পামেলার অপরদিকে।রূপার মনের হিংসা,অসোন্তোষ, পাহাড় প্রমাণ চাহিদা ই হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ালো। অপরদিকে লোভাতুরা কল্যানীদেবীও মেয়েকেই অবলম্বন করেছেন পাওনা গন্ডা মেটাবার আশায়।মেয়েকে দুনিয়ার সবটুকু দেওয়ার দুর্নিবার লোভ তার মনে।তাতে যদি বা অন্যের থেকে কেড়েও আনতে হয় তো হবে। পাছে ঋজু বৌকে বেশি দিয়ে ফেলে বোনকে ছেড়ে,ফাঁকিতে পড়ে যায় মা মেয়ে! সেদিক এও তো চোখ রাখতেই হয়। সুতরাং একদিকে জেঠিমার বৌয়ের প্রতি প্রচ্ছন্ন ঈর্ষা ও অপরদিকে মায়ের লোভ, হিংসা সবকিছুর একমাত্র আধার হিসাবে রূপার প্রকৃতি হয়ে উঠল আরো অপ্রতিতিরোধ্য।আর পরিণাম হিসাবে ননদ বৌদির সম্পর্ক যেন দাঁড়িপাল্লা।রূপার জীবনের লক্ষ্য বৌদির পাল্লার সমতা রক্ষা করে যেন আরও ভারী হয়ে ধীরে ধীরে মাটির দিকে নেমে যাওয়া।আর সেজন্য প্রয়োজন মনের মধ্যেকার অসন্তোষ এর আগুনটিকে সারাক্ষণ জ্বালিয়ে রাখা।ফুঁ দিয়ে তাকে উস্কিয়ে দেবার লোক ও এখন বহাল আছে।যারা সারা ঘর ধোঁয়ায় ভরিয়ে দিয়ে সম্পর্ক গুলো কে ঝাপসা করে তুলবে।



যাই হোক এই ধোঁয়ার তাতেই পামেলা ঋজুর সংসারের আরো দুটি ক্যালেন্ডার বদলে গেল। সংসারে নতুন অতিথি এলো।পামেলা-ঋজুর ছেলে,রিন্টু।আর ওদিকে বৌদির সমান দামের থেকে বেশি দামের বেনারসী,সমান সমান দামের, ডিজাইনের গয়না,সমান সমান খাট আলমারি সহযোগে অনুপমের সাথে বিয়ে হয়ে গেল।

যে হিংসার এর আগুনে ফুঁ দিয়েছিলেন অনুপমা দেবী সেই আগুন এই এবার ঘর পুড়লো নিজের ই।বৌ -ছেলে নিয়ে ঋজু আলাদা হয়ে ফ্ল্যাটে চলে গেল। তবে এই সিদ্ধান্তে ঋজুর পাশে ছিলেন অভিজ্ঞ প্রদীপবাবু। ওদের গৃহপ্রবেশের দিন পামেলাকে আশীর্বাদ করে বলেছিলেন,”রিন্টুকে একটা সুস্থ,সহজ সরল পরিবেশের খুব দরকার।তাই আমি ই এই সিদ্ধান্ত নিলাম বলতে পারিস। হিংসা, রেষারেষির যে হাওয়া চলছে তার থেকে ওকে দূরে রাখা দরকার।”আর অপরদিকে অনুপমা দেবী শাপ শাপান্ত করলেন ছেলে বৌ কে।নাতিটা ও যে ঐ স্বার্থপর অমিশুকে পামেলার মতোই হবে সেই ভবিষ্যত ও নির্ধারণ করে দিলেন।তবে ছেলের গৃহপ্রবেশে গেলেন। চোখে সবটাই দেখা চাই যে।রূপাও এলো দাদার গৃহপ্রবেশে।এসেই তো আকাশে পা।এতো কিছু নিয়ে বৌদি থাকবে,তায় আবার একা।শ্বশুর শাশুড়ির বালাই ছাড়া। আর সে কি না অনুপমের রাবণের গুষ্টি সামলাবে!!নৈব নৈব চ। সুতরাং আগুন এবার ছড়ালো রূপার শ্বশুরবাড়িতেও ।সবার সাথে ঝগড়া করে আলাদা হলো রূপা। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে। পাহাড় সম লোন নিয়ে সমান সমান দামের বৌদির মতোই এক্কেবারে একখানা ফ্ল্যাট হলো রূপার। রূপার এই চাওয়াও ভীষণ ন্যায্য ও সংগত ঠেকলো মা জেঠিমার কাছে।তাই তো রূপার কি কিছু ই হবে না।ও কি ঐ রাবণের গুষ্টি আগলে পড়ে থাকবে?মেয়ের দবদবা দেখে এখন কল্যানীদেবীর মুখে হাসি ধরে না। মনে এখন অপার শান্তি তাঁর।পামেলার যা হয়েছে ওর ও তাই তাই ই হলো।ছেলেও হয়েছে রূপার।নাম চিন্টু। দুই ভাইয়ের নামে মিল থাকুক।রিন্টুর থেকে বছর চারেক এর ছোট চিন্টু।যাক্ সব হয়েছে রূপার।জেদ করে, রেষারেষি করে, হিংসা করে।যেন একটা যুদ্ধ চলেছে এতো দিন ধরে ওর ভেতরে, বাইরে, সর্বত্র। সাথে দুই সেনাপতি নিয়ে।

সব মিটে গেছে।যা যা দরকার ছিলো।
এখন মাঝে মাঝে প্রয়োজনে সময়ে সময়ে রাগ ক্ষোভ কমেও মাঝে মাঝে। তখন দুই জায়ে নাতি দেখার নাম করে আসে পামেলার কাছে। তখন রূপার সৌভাগ্য,গাড়ি বাড়ি নিয়ে , অনুপমের প্রমোশন, বেড়াতে যাওয়া,চিন্টুর রেজাল্ট সব কিছু সবকিছু নিয়ে বেশ করে গল্প করে যায়।রূপার এখনও হচ্ছে, কিন্তু পামেলাকে সবটুকু না শোনালে যেন সব হওয়াটা বাকি থাকে।ওটাই এখন এঁদের বার্ধক্যের একমাত্র শান্তি, আনন্দ লাভের রাস্তা অনুপমা দেবীর ও।হোক না নিজের ছেলের বৌ,তো কি, চিরকালের প্রতিদ্বন্দ্বী যে! নিজের মন দিয়ে ই সকলে দুনিয়া দেখে,বোঝে।তাই বুঝি নিজের আর দুনিয়ার মধ্যে বিস্তর ফারাক থেকে যায়।

সময় ভার বইতে বইতে এগোতে থাকে। সংসারের সকল পাঁক,কুটিলতা,রাগ, হিংসা , ভালো মন্দ সবার সবটুকু ভার নিয়ে ই আরও মাস দিন বছর কেটে গেছে।পামেলার ছেলে রিন্টু,আর রূপার ছেলে চিন্টুও এতো দিনে বড়ো হয়ে উঠেছে।রিন্টু সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, ভালো কোম্পানিতে চাকরি ও করে। এবার পামেলা ওর জন্য পাত্রী খুঁজছে। পায়ে পায়ে বয়স ত্রিশ পেরিয়েছে সবে।কাল ই একখানা ভালো সম্বন্ধ দেখে এসেছে। বিশাল বড়োলোকের মেয়ে।তাই ঋজুর একটু আপত্তি।নইলে মেয়ে অসাধারণ সুন্দরী।এম এ পাশ। ওদের ও ছেলে পছন্দ হয়েছে।এই এক্ষুনি ফোন করে সেখানকার কথাই ফোনে জানাচ্ছিলেন অনুপমা দেবী তাঁর ছোট জা কল্যানীকে।হ্যাঁ,সব দ্বন্দ্ব, হিংসার শেষে প্রদীপবাবু গতবছর গত হবার পর থেকে ছেলের কাছেই থাকেন অনুপমা দেবী।বাড়ি বিক্রি হয়ে গেছে।সব ব্যবস্থা অভিজ্ঞ প্রদীপবাবু করেই গেছেন। কল্যানীদেবী ও প্রণববাবু ফ্ল্যাটে থাকেন। এখন আর তেমন কোন কাজ নেই দুই জা য়ের।যুদ্ধ প্রায় শেষ।তাই সারাজীবন এর কূটনৈতিক সঙ্গী ছোট জা এর সাথে ই ফোনালাপ ই একমাত্র প্রধান কাজ। এখানে যখন যা হচ্ছে ওমনি ওখানে সে কথা চলে যাচ্ছে।সেখান থেকে ভায়া হয়ে সোজা রূপার কানে।পাত্রীর ফটো আগেই দেখা হয়ে গেছে।আর বাড়ি পরিবার যা শুনলো রূপা আর তার মা,তাতে তো আকাশ থেকে পড়লো।

“হা হতোস্মি!”যবে থেকে রূপা শুনেছে দাদা বৌদি রিন্টুর জন্য পাত্রী দেখছে, তবে থেকে ই সে ও চিন্টুর জন্য পাত্রী দেখা শুরু করে দিয়েছে। লক্ষ্য রিন্টুর আগেই চিন্টুর বিয়ে টা দিতে হবে। জিততে হবে, বৌদির কাছে।হোক না চিন্টু বছর চারেক এর ছোট। তবু তার বয়স ও তো সাতাশ হলো।সেও উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মচারী। কিন্তু কই এরকম সম্বন্ধ তো এলো না।পড়ি কি মরি করে পরদিনই ছুটলো রূপা দাদার ফ্ল্যাটে।এ পাত্রী ই তার চাই। একে সুন্দরী তায় বড়োলোক।এ পাত্রী হাতছাড়া করা চলবে না।তার উপর বৌদির নাকি মনে ধরেছে। তাহলে তো এর চেয়ে ভালো সম্বন্ধ আর নেই।

সারাজীবন মানুষ আর ভগবানের কাছ থেকে অপরিসীম প্রশ্রয়ে আজ পঞ্চাশোর্ধ রূপা অনমনীয়, প্রখরা, অসহিষ্ণু। দাদাকে বলে,”দাদা এই পাত্রীই আমি চাই আমার ছেলের বৌ হিসাবে।”


পামেলা,”কিন্তু,রূপা, ঠিক আছে, আগে তো ওনাদের সাথে কথা বলো,মেয়ে দেখো। দুই পক্ষের কথপোকথন হোক। আগে থেকেই কি করে এতোটা এগিয়ে যাচ্ছো। “
ঋজু বোঝায়,”দ্যাখ,আমরা এখানে ততটাও রাজী নই, হয়তো তোর বৌদি অরাজী নয়, তবে,ওরা আমাদের থেকে অনেক বড়োলোক। এতোটা অসম পরিবারে বিয়ে! এখন ও ভাবনা চিন্তায় আছি। তবে ওরা রাজী এখানে মেয়ে দিতে। আমাদের রিন্টুকে ওদের পছন্দ হয়েছে।”


তবে কিছু ভাবনা চিন্তা করার ক্ষমতা ভগবান রূপাকে কে দেয় নি,আর মানুষ ওকে করায় নি। সুতরাং ওর সে ক্ষমতা নেই।রূপা অস্থির হয়ে বলে।”তা, ওনাদের ফোন নম্বর টা দে।আমি কথা বলছি। আমার ছেলে ও ভালো রোজগেরে,ফ্যালনা নয়।ওরা যদি রিন্টুকে পছন্দ করে তো চিন্টুকেও করবে,আর তোর যখন ইচ্ছে নেই সেখানে কাজ করবি ই বা কেন?।”বলে ঠেস দিয়ে আরো কিছু কথা বলে বৌদির দিকে তাকায়।তারপর, একরকম ঋজুকে রাজী করিয়েই ওদের ফোন নম্বর নেয়।পরিণাম এক অঘ্রাণেই সুন্দরী দিয়া রূপার ছেলের বৌ হয়ে রূপার ঘরে আসে। পামেলা যায় বিয়েতে।হ্যাঁ, তবে এবার কেন জানি না, অসুস্থতার ছুতোয় অনুপমা দেবী বিয়েতে গেলেন না।এ বিয়ে নিয়ে “ছোট”র সাথে সেভাবে কথাও বললেন না। ফোনটা কমে আসছে এবার যেন। শুধু মেয়ে আসার সময় গিয়ে হার দিয়ে আশীর্বাদ করে এলেন মাত্র।থাকলেন ও না। নিজের জায়গা ছাড়া এখন ঘুম হয় না।চোট লেগেছে মনে। এভাবে পাত্রী হরণ হবে বোঝেন নি। রূপার ব্যবহার এবার খারাপ লেগেছে।যাই হোক বৌ পরের, কিন্তু নাতি তো নিজের।রিন্টু দেখতেও গেছিল সেজেগুজে একদিন এই মেয়েকেই।সে নিয়ে অল্পবিস্তর ঠাট্টাও হয়েছে। নাতির মনের কথা ভেবে ই ঠাকুমার বুকটা কাঁদলো বুঝি।এই বিয়ে নিয়ে ঋজু পামেলা র মনেও একটা কেমন অস্বস্তির দানা।

তাই সব কাটাতে ওরা গেলো হরিদ্বার বেড়াতে।মাকে তীর্থদর্শন করাবে।সেই গঙ্গারতির সময় হঠাৎ দেখা পামেলার বান্ধবী রত্নার সাথে। ওরাও এসেছে।রত্না ডাকলো ওর মেয়ে “দেবী, এদিকে আয়, আমার বান্ধবী,প্রণাম কর।”গঙ্গারতির আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো দেবীর মুখ। পামেলা ঋজুর পাত্রী দেখা হয়ে গেল।দেবী,রত্নার একমাত্র মেয়ে।ডাক্তার। পামেলা,”তোর মেয়েকে আমার ছেলের বৌ করতে চাই।”রত্না,”তবে তো বেঁচে যাই রে “হাসির রোল ওঠে। তারপর শঙ্খ বাজে।উলুধ্বনি উড়িয়ে দেবী রিন্টুর বৌ হয়ে পামেলার অন্দরমহলে পা রাখে।

রূপা এলো,কল্যানীদেবীও এলো।সবটা যাচাই করে দেখা চাই। রইলো। আত্মীয় স্বজনের কথাবার্তা কান এড়ালো না।”ডাক্তার বৌ, ইঞ্জিনিয়ার ছেলে,তোর ই তো দিন রে পামেলা।”আবার গা জ্বালা দিয়ে উঠলো রূপার।কল্যানীদেবী বললেন বেশ জোরের সাথে,”আমাদের দিয়াও ইচ্ছা করলেই চাকরি করতে পারে।করে না তাই।ও এম এ পাশ।”বড়ো ক্লিশে শোনালো।ধোপে টিকলোনা।
দিয়ার ফর্সা রঙ, সুন্দর চেহারা যেন দেবীর পাশে ম্লান লাগছে,রূপার চোখে।আর যতোই লাগছে, ততই রাগছে, ফুঁসছে।

সেদিন,সন্ধ্যায় দিয়া চা এনে,”মা, চা এনেছি মা।”
চিৎকার করে ওঠে রূপা।”এই ঘরের কাজ আর রূপচর্চা ছাড়া কিছু জানা আছে কি তোমার?এনেছো আমার মাথা কিনেছো।যাও এবার।”তারপর, একটু থেমে,বৌ দাঁড়িয়ে আছে দেখে,”এম এ পাশ ই করেছেন উনি,আর ফর্সাই হয়েছেন,বাপের টাকা আছে ব্যস।আর কোন গুণ আছে?”আবার সঙের মতো দাঁড়িয়ে রইলে কেন?”

আগুন আবার জ্বলে উঠেছে , ধীরে ধীরে লেলিহান শিখা নিয়ে আবার ছড়িয়ে যাচ্ছে।ধোঁয়াটে করছে সম্পর্কগুলোকে।

সৌজন্যে – প্রতিলিপি

ekhansangbad
Author: ekhansangbad

Related News

Also Read