হারান মণ্ডল ছিলেন দক্ষিণেশ্বরের গোশালার রাখাল। তাঁর খুব গাঁজার নেশা। কাজের সময় গাঁজার নেশায় পড়ে থাকতেন আলমবাজার খালের পাশে। মন্দিরের দারোয়ানরা অনেক সময় অচৈতন্য হারানকে তুলে নিয়ে আসত মন্দিরে।
তাঁর এই বদ নেশার জন্য খাজাঞ্চি একবার তাঁকে বরখাস্ত করে দিয়েছিল। তাঁর স্ত্রী ভাণ্ডারীবাবুর পায়ে পড়ে কেঁদেছিলেন। ভাণ্ডারীবাবুর অনুরোধে সেবারের মতো তাঁর কাজটা যায়নি।
শ্রীরামকৃষ্ণ হারানের এই অবস্থা দেখে একদিন বলেছিলেন– “দেখ হারান, তুই তো দেশি গাঁজা খেয়ে মাঠে-ঘাটে পড়ে থাকিস; আমি তোকে বিলিতি গাঁজা দেব, দেখবি তাতে কেমন মজার নেশা হয়।” হারান লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে। লজ্জা ও সঙ্কোচে হারান খুব একটা ঠাকুরের কাছে আসতেন না।
কয়েকদিন কেটে গেল। ‘বিলিতি গাঁজা’ নিতে হারান আসছে না দেখে শ্রীরামকৃষ্ণ মা কালীর পায়ের একটি শুকনো বেলপাতাকে গুঁড়িয়ে শালপাতায় মুড়ে হারানের গোশালায় লোক মারফৎ পাঠিয়ে দিলেন। হারান জানতে পারেন,পরমহংসদেব এটি পাঠিয়েছেন। সেটা পেয়ে হারান মহাখুশি। ভাবেন, বিলিতি গাঁজা পেয়েছেন।
তৎক্ষণাৎ ছুটলেন খালধারে গাঁজা টানতে। কলকের আগুনে শালপাতা-মোড়া গুঁড়ো ঢেলে দিলেন, তারপরেই কয়েকটা টান। হারানের নেশা জমে গেল। মনের আনন্দে ফিরে এলেন বাগানে। তারপরও কয়েকদিন কাটল। হারান আর গাঁজাখোরদের সঙ্গে গাঁজা টানতে খালধারে যাননি।
তাঁর সঙ্গীরা একদিন তাঁকে ধরে বসল, কেন সে গাঁজার আসরে যায়নি? হারান বললেন, ‘ভটচাজ্জি মশাই এমন বিলিতি গাঁজা দিয়েছেন যে সেই খেয়ে আর দিশি গাঁজা টানতে মন আসে না।’ সেই একদিনের গাঁজা খেয়েই হারানের নেশা চিরতরে চলে গিয়েছিল।
হারান তারপর সকলেরই প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছিলেন। রোজ সন্ধ্যায় বিষ্ণুঘরের কীর্তন আসরে হাজির হতেন। মন্দিরের কাজ থেকে অবসর নিয়ে কীর্তনের দল গড়েছিলেন। বাড়িতে পরমহংসদেবের পটের সামনে বসে কীর্তনগান করতেন।