রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন নন্দীগ্রামে বামপন্থী হিন্দু ভোটারদের ভোটে জয়ী হয়েছেন তিনি ।বামের ভোটে রামের জয়ের শুভেন্দুর দাবি মিথ্যা প্রমান করতে উঠে পড়েছে সিপিএম।সেই প্রচেষ্টা এবার পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘার সভা থেকে সারলেন সূর্যকান্ত মিশ্র ।
উত্তরবঙ্গে দলীয় কর্মীদের থেকে শুনেছিলাম তৃনমূলকে হঠাতে রামচন্দ্রের পার্টি বিজেপিকে আগে আনতে হবে।আরে রামচন্দ্র পার্টি করেছিলো কিনা রামায়নে পড়িনি,আপনারা পড়েছেন কিনা জানি না ? এই ধর্মের কারবারী আর লুটেরাদের হটাতে হবে।কর্মহীনতা-মূল্যবৃদ্ধি থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। এই শক্তিকে হটিয়েই জনগণের পঞ্চায়েত গড়ে তুলতে হবে। রবিবার দিঘায় সিপিআই(এম)’র ডাকে সমাবেশে এই আহ্বান জানিয়েছেন পার্টি পলিটব্যুরো সদস্য সূর্য মিশ্র।
বিজেপির বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও ঘুরিয়ে বাম ভোট বিজেপিতে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন সূর্যকান্ত মিশ্র ।দিঘার এই সভাতেই বলেন পাঁচ বছর আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এগরার সাহাড়ায় দলীয় কর্মীদের এমন এক সভা থেকে জিজ্ঞাস করেছিলাম আপনারা কি বিশ্বাস করেন আগে রাম পরে বাম ।অর্থাৎ আগে বিজেপিকে জেতাতে হবে তারপর ক্ষমতায় ফেরার জন্যে অপেক্ষা করতে হবে ।কর্মীরা না বলেছিলো।তবু পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির ভোট বাড়লো,বামেরা কমলো।তারপর লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনেও একই ফল ।ক্ষমতায় তৃনমূল,দ্বিতীয় বিজেপি আর তৃতীয় বামেরা।
দলের কর্মীদের হুশিয়ারি দিয়ে বলেন কেউ যদি মনে করেন বিজেপিতে গিয়ে তৃণমূলকে ঠেকানো যাবে আবার উল্টো দিক থেকেও কেউ যদি মনে করেন তৃণমূলে গিয়ে বিজেপিকে হটানো যাবে । এরকম কেউ থাকলে লাল ঝাণ্ডার পার্টিতে তার জায়গা নেই, জায়গা থাকবে না এটা বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে সব জায়গায় ।দিঘাতে সিপিআইএমের মহকুমা সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বললেন সূর্যকান্ত মিশ্র।
দিঘার এদিনের সভায় লোক ছিলো হাতে গোনা ।বেশীরভাগ চেয়ার ছিলো ফাঁকা।পাঁচ বছর আগে এগরার সর্বদয়ে যে সভা হয়েছিলো সেখানে বেশী সংখ্যায় কর্মী সমর্থকেরা হাজির ছিলো বলেও দাবি করেন নিজের ভাষনে।
তৃণমূল দলে সবাই চোর নয় সবাই খারাপ নয়, ভালো মানুষ আছেন। আবার একইভাবে সব বিজেপি দাঙ্গা বাজ নয় ভালো বিজেপি করেন লোকজন আছেন। কেউ বিজেপিকে হারাবার জন্য তৃণমূলে গেছেন কেউ তৃণমূলকে হারানোর জন্য বিজেপিতে গেছেন।বড় চোরদের আমরা চিনি। সবাই তাই বলে খারাপ নয়। এরকম কিছু লোকজন আছেন সরকারের থেকে কিছু সুযোগ সুবিধা নেবেন পাবেন তাই গেছেন। আবার পুলিশ বলতে সব অফিসার সব পুলিশকে দোষ দিই না। সবাইকে আপনারা দোষ দেবেন না। দলের কর্মীদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়েছেন সূর্যকান্ত মিশ্রের।
জেলায় বিভিন্ন সমবায় সমিতির নির্বাচনে যেভাবে রাম-বাম জোটের প্রসঙ্গ আসছে তাতে করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।স্থানীয় – জেলা নেতৃত্বের প্রতি ঊষ্মা প্রকাশ করেছেন নিজের ভাষনে।তবে বাম থেকে রামের দিকে যে ঝোঁক দলীয় কর্মীদের তৈরী হয়েছে সেই প্রবনতা আটকাতে বারবার বিজেপি ও তৃনমূল এক এটা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন সূর্যকান্ত।
তাই মিশ্র বলেন,বিজেপি, আরএসএস’র রাজনৈতিক শাখা, নির্বাচন কমিশনে গিয়ে তৃণমূল দল তৈরি করতে সাহায্য করেছিল। মমতা তাই বারে বারে তার কথা ও আচরণে বিজেপি প্রীতি প্রকাশ্যে আসে। কখনো আরএসএস-এর অনুষ্ঠানে গিয়ে তাদের প্রকৃত দেশভক্ত বলেন মমতা ব্যানার্জি। আরএসএস মমতা ব্যানার্জিকে ‘সাক্ষাৎ দুর্গা’ বলে। এই দুই শক্তি মিলে শোষণের নির্মম চেহারা তৈরি করেছে সারা দেশ এবং এরাজ্যেও। চিনতে হবে এই দুই শক্তিকে। এই সমস্ত গোপন বোঝাপড়া গ্রামের মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে।
দলীয় কর্মীদের অর্থনীতির পাঠ পড়িয়ে,কখনো আবার গোয়েবলসের তত্ত্ব তুলে ধরে মিশ্র বলেন,মানুষকে বোঝাতে হবে এদের বোঝাপড়া। অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরি করছে বিজেপি। তৃণমূল পাল্টা জগন্নাথ মন্দির তৈরি করছে দীঘায়। মন্দির নিয়ে রাজনীতি চলছে। কাজ নেই, অর্থনৈতিক সংকট, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারি চরম সীমায় পৌঁছেছে। এই সব কিছু থেকেই ভুলিয়ে রাখতে চাইছে দুই শক্তিই।